দৈনিক ইত্তেফাক
১২ই মে ১৯৬৬
বিনাশর্তে আশু মুক্তি দাবী
নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারে নিন্দমুখর পূর্ব বাংলা
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
শেখ মজিবুর রহমান এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারে সমগ্র দেশ নিন্দমুখর হইয়া উঠিয়াছে। ঢাকা এবং প্রদেশের সর্বত্র সরকারী দমন নীতির নিন্দা করিয়া বিনাশর্তে নেতৃবৃন্দের আশু মুক্তির দাবীতে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভের ঝড় অব্যাহত রইয়াছে।
গতকাল শহরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শেখ মুজিব ও অন্যান্য নেতার মুক্তির জন্য বিক্ষোভ, মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে বায়তুল মােকাররমে পথসভার পর বিক্ষোভকারীরা বন্দী নেতাদের মুক্তির দাবীসূচক শ্লোগান দিতে দিতে সদরঘাট পর্যন্ত যায়। পথিমধ্যে এবং সদরঘাটে তাহারা পথসভা করে। গতকাল আদমজী মিল শ্রমিকরাও অন্যান্য দিনের মত কাজে যাওয়ার ও কাজ হইতে বাহিরে আসার সময় শেখ মুজিব ও অন্যান্য বন্দী নেতার মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের প্রতিবাদ
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে তেজগাঁও শিল্প এলাকার ৩০ সহস্রাধিক শ্রমিক গতকাল (বুধবার) প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে। অপরাহ্নে নাবিস্কো ফ্যাক্টরীর নিকটে অনুষ্ঠিত এক শ্রমিক সমাবেশে তাহারা ঘােষণা করেন যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেখ মুজিবসহ অপরাপর বন্দী নেতার মুক্তি দিতে হইবে।
সভায় বক্তাগণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধি প্রয়ােগের নিন্দা করেন।
সভার এক প্রস্তাবে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান উচ্চমূল্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রােধের ব্যবস্থা করার দাবী জানান হয়। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, আবাসিক সুযােগ-সুবিধা প্রদান ও শ্রমিকদের পুত্র-কন্যাদের পড়াশুনার সুব্যবস্থা করার জন্যও সভায় দাবী জানান হয়।
সভাশেষে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া সম্বলিত ব্যানারসহ শ্রমিকদের একবিরাট বিক্ষোভ মিছিল শিল্প এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে তাহারা শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, শ্রমিক নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর মুক্তি চাই, রাজবন্দীদের মুক্তি চাই, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ কর প্রভৃতি শ্লোগান দান করে।
গতকল্য (বুধবার) গভীর রাত্রি পর্যন্ত প্রদেশের বিভিন্ন স্থান হইতে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের সংবাদ ইত্তেফাক অফিসে আসিয়া পৌছে। আগামীকল্য (শুক্রবার) এই সমস্ত সভা ও বিক্ষোভের বিবরণ প্রকাশিত হইবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব