আজাদ
৯ই মে ১৯৬৬
আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব
জমির খাজনা ও কৃষকদের প্রদত্ত ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের দাবী
(স্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (রবিবার) পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া সরকারকে জমির খাজনা আদায়, কৃষকদের প্রদত্ত ঋণের কিস্তি আদায় এবং সার্টিফিকেট জারী বন্ধ রাখার আহ্বান জানান। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব শেখ মুজিবর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের নবগঠিত ওয়ার্কিং কমিটির এই প্রথম বৈঠকে দেশের বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতির জন্য ‘উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওয়ার্কিং কমিটি এই মর্মে মত প্রকাশ করেন যে, সরকার কর্তৃক সমগ্র প্রদেশে বাধ্যতামূলক লেভী প্রথা চালু, খাদ্য পরিস্থিতির দ্রুত “অবনতির অন্যতম কারণ। কেননা, এই লেভী প্রথা জমিতে উৎপন্ন ধানের পরিমাণের উপর ধার্য্য না করিয়া একরভিত্তিক হিসাবে করা হইয়াছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ হইতে অবিলম্বে সমগ্র দেশে পূর্ণ রেশনিং প্রথা প্রবর্তন, প্রতিটি ইউনিয়নে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের স্বল্পমূল্যের দোকান চালু এবং বেকার কৃষকদের জন্য খয়রাতি সাহায্যের ব্যবস্থার দাবী জানান হয়।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে টেপাতা ব্যবহারের উপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবী জানান হয়। অপর এক প্রস্তাবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য হইতে আগত মােহাজেরদের পুনর্বাসন ব্যবস্থার আহ্বান জানান হয়।
ওয়ার্কিং কমিটী আওয়ামী লীগ কর্মীদের শান্তিপূর্ণ ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ৬-দফার বাস্তবায়নের জন্য অবিরাম সংগ্রামের নির্দেশ দেন। ইহা ছাড়া কমিটি আওয়ামী লীগের সভাপতির সহিত আলােচনাক্রমে সাধারণ সম্পাদককে “৬-দফা কর্মসূচী সপ্তাহ উদযাপনের জন্য সময় ধাৰ্য্যের নির্দেশদান করেন।
কমিটি পাক-ভারত যুদ্ধ সমাপ্তির পরও এতদিন পর্যন্ত দেশে জরুরী অবস্থা চালু রাখায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী জানায় এবং এই মর্মে মত প্রকাশ করে যে, পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইন বিরােধী রাজনৈতিক দল এবং জনপ্রিয় সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হইতেছে। কেননা এই সকল দল ও পত্রিকা জনসাধারণের অভাব-অভিযােগ ও মনােভাব ব্যক্ত করিতেছে।
আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করে এবং সংবাদপত্রের উপর সরকারের দমন নীতির তীব্র বিরােধিতা করে।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জনসভা
গতকল্য রবিবার নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টাউন হল ময়দানে ৬-দফার পরিপ্রেক্ষিতে এক জনসভা অনুষ্ঠীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব শামসুদ্দোহা। সভায় বক্তৃতাকালে জনাব শেখ মুজিবর রহমান ৬-দফা কর্মসূচী বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব