You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.06 | ৬-দফার সমর্থনে বিভিন্ন স্থানে জনসভা: জনগণের বাঁচা-মরার দাবী বাস্তবায়নের সঙ্কল্প | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
৬ই মে ১৯৬৬

৬-দফার সমর্থনে বিভিন্ন স্থানে জনসভা
জনগণের বাঁচা-মরার দাবী বাস্তবায়নের সঙ্কল্প
(নিজস্ব সংবাদদাতা)

৬-দফা বাস্তবায়নের দাবীতে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটি সভায় ৬-দফা বাস্তবায়নের দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করিয়া প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন বক্তা আওয়ামী লীগের ৬-দফা কর্মসূচীকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচা-মরার দাবী বলিয়া মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি স্থানীয় টাউন ফুটবল মাঠে চুয়াডাঙ্গা মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৬-দফার দাবীতে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। মহকুমা আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আবুল হাশেম মােক্তার সভায় সভাপতিত্ব করেন।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক এবং প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সদস্য জনাব সা’দ আহমদ এডভােকেট উক্ত সভায় আওয়ামী লীগের ৬-দফা দাবীর বিভিন্ন দিক পর্যালােচনা করিয়া বক্তৃতা করেন।
জনাব সা’দ আহমদ বলেন, লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবী জানাইয়াছি। ইহাতে কাহারাে আকাইয়া উঠার কিছু নাই। জনাব সাদ আহমদ বলেন, শক্তিশালী পাকিস্তান গড়ার জন্যই আমরা স্বতন্ত্র মুদ্রা ব্যবস্থা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবী জানাইতেছি। পাকিস্তানের ভৌগােলিক অবস্থা বিচার করিলে ভিন্ন কোন পথ নাই।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব ডাঃ আসহাবুল হক অত্রাঞ্চলের প্রকট খাদ্য সমস্যার কথা উল্লেখ করিয়া বলেন যে, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা মহকুমার সর্বত্র ধান-চাউলের মূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। তিনি অবিলম্বে মহকুমার সর্বত্র পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জোর দাবী জানান।
প্রদেশের হাজার হাজার বেকার বিড়ি শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের স্বর্ণসূত্র পাটের বাদ দেওয়া গােড়ার অংশ ভারতে রফতানী মারফত টেপাতা আমদানী করা যাইতে পারে এবং বিড়ি শ্রমিকদের জীবনযাত্রার পথ সুগম করা যাইতে পারে।
উক্ত সভায় চুয়াডাঙ্গা মহকুমা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব ইউনুস আলি উকিল এবং অর্গানাইজিং সেক্রেটারী জনাব ইনসান আলি মৃধা প্রমুখ। সীমান্ত এলাকায় জনসাধারণের নিকট হইতে কিভাবে লেভী আদায় করা হইতেছে, তাহার বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন। তাহারা অবিলম্বে এই ব্যবস্থার আশু অবসান দাবী করিয়া চাষীদের নিকট হইতে সংগৃহীত ধান ফেরত দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
অতঃপর সভায় দেশের সর্বত্র পূর্ণাঙ্গ রেশনিং প্রথা চালু, ৬-দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন, টেপাতা বন্ধ অর্ডিন্যান্স বাতিল, শেখ মুজিবের উপর হইতে সকল মামলা প্রত্যাহার প্রভৃতি কতিপয় দাবীতে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যশাের মিউনিসিপ্যাল আওয়ামী লীগ সম্মেলন সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে মওলানা আবদুর রাজ্জাক চিস্তীর সভাপতিত্বে যশাের মিউনিসিপ্যাল আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিবের প্রতি অযথা হয়রানি, বসন্ত ও কলেরার ক্রমপ্রসার এবং খাদ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া বক্তৃতা করেন মেসার্স মসিয়ুর রহমান ও রওশন আলী।
সভায় জনাব মােহাম্মদকে সভাপতি জনাব মইনউদ্দিন মিয়াজীকে সম্পাদক এবং জনাব আবদুর রশিদ খানকে কোষাধ্যক্ষ করিয়া কার্যকরী পরিষদ গঠন করা হয়। সুতরাপুরে ৬-দফার দাবীতে জনসভা সম্প্রতি বগুড়ার জামগ্রাম হাট প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৬-দফার দাবীতে একবিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কাহালু থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব হজরত উল্লা। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব বি,এম, ইলিয়াস বলেন, আমাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম চলিতে থাকিবে। শেখ মুজিবর রহমানকে জেলে পুরিয়া পূর্ব পাকিস্তানের প্রাণের দাবী নস্যাৎ করা যাইবে না। অতঃপর তিনি ৬-দফা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব এ, কে, মুজিবর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ গদি চায় না আওয়ামী লীগ আপামর জনসাধারণের মঙ্গল কামনা করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঘরে বসিয়া রাজনীতি করে না। তিনি ৬-দফার বাণী ঘরে ঘরে পৌছাইয়া দেওয়ার জন্য কর্মীদের আহ্বান জানান।
সন্দ্বীপ আওয়ামী লীগের তৎপরতা
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমানের সন্দ্বীপ সফরের পর এই এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে। বর্তমানে সন্দ্বীপের আনাচে-কানাচে পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচার দাবী ৬-দফা খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছে। আওয়ামী লীগের কর্মীগণ ৬-দফার বাণী লইয়া গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়িয়াছেন এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিটি গঠনের জন্য তৎপরতা চালাইতেছেন। বরিশালে আওয়ামী লীগের জনসভা সম্প্রতি জনাব আমিনুল হক চৌধুরীর বাসভবনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য জনাব ইউনুস এবং জনাব নূরুল ইসলাম মঞ্জুরকে যথাক্রমে সভাপতি ও সম্পাদক করিয়া একটি শক্তিশালী সম্বর্ধনা কমিটি গঠন করা হইয়াছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, আগামী ১২ই মে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় বক্তৃতার জন্য শেখ সাহেব এখানে আগমন করিতেছেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব