আজাদ
২৬শে এপ্রিল ১৯৬৬
জনাব আতাউর রহমান খান বলেন :
মুজিবের প্রতি সরকারের আচরণে জনগণ স্তম্ভিত হইয়া গিয়াছে
(স্টাফ রিপাের্টার)
ঢাকা, ২৫শে এপ্রিল।-পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক উজিরে আলা এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিশিষ্ট নেতা জনাব আতাউর রহমান খান অদ্য সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন যে, বিচারের নামে শেখ মুজিবর রহমানকে যেভাবে হয়রানী করা হইতেছে তাহাতে জনগণ স্তম্ভিত হইয়া পড়িয়াছে। শেখ মুজিবর যেখানেই জনসভায় বক্তৃতা করিয়াছেন সেখানেই সরকার পাকিস্তান দেশরক্ষা আইন এবং নিরাপত্তা আইন বলে তাহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিয়াছেন। এই মামলার দোহাই দিয়া তাহাকে যেরূপভাবে একস্থান হইতে অন্যস্থানে নিয়া যাওয়া হইতেছে তাহা অত্যন্ত নিষ্ঠুর। রাজনৈতিক হয়রানীর ইতিহাসে এইরূপ নিষ্ঠুরতার তুলনা নাই। তিনি বলেন যে, অন্য জেলার একটি মামলার জন্য তাহাকে কোন এক স্থানে গ্রেফতার, মুক্তির আদেশ দিবার পূর্বেই আবার ভিন্ন এক জেলার আর এক মামলার দরুন পুনরায় গ্রেফতার। পুলিশের সুবিধামাফিক নির্দিষ্ট সময়ের পরােয়া না করিয়া ট্রেনযােগে তাহাকে স্থানান্তরিতকরণ, এইসব ঘটনাদৃষ্টে কমপক্ষে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, ইহা সবই ষড়যন্ত্রমূলক।
জনাব আতাউর রহমান খান বলেন যে, এই সম্পর্কে আমি সরকারকে ইহা স্মরণ করাইয়া দেওয়া কর্তব্য মনে করি যে, “লাহাের প্রস্তাব ভিত্তিতে পূর্ব আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও দুই অর্থনীতির দাবী এবং পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পূর্ব পাকিস্তানেই রহিয়াছে” এই কঠিন বাস্তবের অনুমােদনদানের দাবী কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তি বা গ্রুপ বা দলের দাবী নয়, এই সকল দাবীই পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনগণের প্রাণের দাবী।
তিনি বলেন যে, জনগণের ন্যায্য দাবী-দাওয়া গ্রহণ বা কোন অনুমােদনের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট এবং গবর্ণরসহ সরকারের বিভিন্ন মুখপাত্রগণ আমাদিগকে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টিকারী বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া চলিয়াছেন; কিন্তু বড়ই কৌতূহলের বিষয় এই যে, তাহারা কেহই তাহাদের সুদীর্ঘ ও শ্রম সাপেক্ষ বিবৃতি ও বেতার ভাষণে কখনও আমাদের দাবীসমূহের কোন প্রকৃত ভুল, অন্যায়, অযৌক্তিক ও বিচ্ছিন্নতাপ্রবণ বলিয়া আখ্যায়িত করিতে পারেন নাই। রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানী করা জনগণের দাবী গ্রহণের বিকল্প পথ নয়। ইতিহাসে এইরূপ অসংখ্য নজীর রহিয়াছে যে, জনগণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষার দাবী নস্যাৎ করিয়া দিতে সরকার বারবারই ব্যর্থ হইয়াছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক উজীরে আলা বলেন যে, ক্ষমতাসীন চক্রের স্বেচ্ছাচারী ও অনমনীয় মনােভাবের সম্মুখেও গণতান্ত্রিক শক্তির নেতাদের দায়িত্ব রহিয়াছে। এই দায়িত্ব হইল, এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং তাহাদের অধিকারের দাবী প্রতিষ্ঠা করা। তিনি দেশবাসী বিশেষ করিয়া গণতন্ত্রকামী দল ও সংস্থাসমূহের প্রতি উপরােক্ত দাবীসমূহ আদায় করার জন্য এবং ক্ষমতাসীন চক্রের সকল দুরভিসন্ধি ও স্বেচ্ছাচারী শাসনের কবলমুক্ত হওয়ার জন্য দেশব্যাপী আন্দোলন গড়িয়া তােলার উদ্দেশ্যে ঐক্য স্থাপনের আহ্বান জানান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব