You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
১৪ই এপ্রিল ১৯৬৬

১৭ই এপ্রিল ‘সম্মুখ সমর’, কিন্তু কোথায়?
শেখ মুজিব বলেন: রাজী তবে খাস কামরায় নহে
জনাব ভুট্টো বলেন: রাজী তবে ১৭ই তারিখে
স্থান পল্টন ময়দান নয়তাে ষ্টেডিয়াম

প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানের সহিত ৬-দফার প্রশ্নে মােকাবিলা সভায় মিলিত হওয়ার স্বপক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো সর্বশেষ যে বিবৃতি দিয়াছেন, প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইলে শেখ মুজিবর রহমান বলেনঃ “নিজ কর্মব্যস্ততার দরুন আমার প্রস্তাব মতে, ২৪শে এপ্রিল পল্টন ময়দানের জনসভায় ৬-দফার প্রশ্নে আমার মােকাবিলা করিতে অসামর্থ্য জ্ঞাপন করিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো আগামী ১৭ই এপ্রিল এই মােকাবিলার যে প্রস্তাব দিয়াছেন, আমি সানন্দচিত্তে তাহা গ্রহণ করিতেছি। কিন্তু যেহেতু জনাব ভুট্টোর প্রস্তাবটি খুব স্পষ্ট নহে, সেই হেতু আমি তাঁহাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাইয়া দিতে চাই যে, জনগণের দাবী ৬-দফা সম্পর্কে উভয়পক্ষের মােকাবিলা হইবে প্রকাশ্য জনসভায়-কাহারও খাস কামরায় নহে। এবং এই মােকাবিলা সভার প্রিজাইডিং অফিসার হইতে হইবে হাইকোর্টের কোন বিচারপতিকে-কোন রাজনৈতিক দলের কেউকেটাকে নহে।
এই প্রস্তাবে সম্মত থাকিলে নির্ধারিত তারিখেই যাহাতে এই জনসভার এন্তেজাম করা যায়, তজ্জন্য আমি আমার সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিনকে রাখিয়া যাইতেছি। তিনি জনাব ভুট্টোর সহিত মােকাবিলা সভার বিস্তারিত কর্মপদ্ধতি স্থির করিবেন। জনাব ভুট্টো যেন তাহার দল ও আওয়ামী লীগের যুক্ত উদ্যোগে এই সভা অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করিয়া উহার বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করেন। দিনের দিন আমি আমার প্রদেশ সফরের অবশিষ্ট কর্মসূচী বাতিল করিয়া হইলেও জনাব ভুট্টোর সহিত উক্ত মােকাবিলা সভায় শরীক হইব। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, শেখ মুজিবর রহমান ফরিদপুর, যশাের ও খুলনা সফরের জন্য অদ্য ফরিদপুর রওয়ানা হইতেছেন। এক প্রশ্নোত্তরে তিনি জানান যে, মােকাবিলা সভার এন্তেজাম সম্পন্ন হওয়ার সংবাদ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্যান্য নির্ধারিত কর্মসূচী বাতিল করিয়া ঢাকায় আসিয়া হাজির হইবেন। পূর্বোক্ত এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান গতকাল (বুধবার) তাঁহার ছয়দফা কর্মসূচী সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে যে কোন জনসভায় বিতর্ক অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে শেখ মুজিব প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ কর্তৃক পল্টন ময়দানে আহূত ২৪শে এপ্রিলের জনসভায় যােগদান করিয়া বিতর্কানুষ্ঠানের সুযােগ গ্রহণের জন্য জনাব ভুট্টোর প্রতি পরামর্শ দেন।
এই বিবৃতিতে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের একদাখ্যাত সেক্রেটারী জেনারেল জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় আগমনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাহার পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে যে কোন জনসভায় আমার সঙ্গে আমার ছয়-দফা ফর্মুলা ও অন্যান্য প্রশ্নে আলােচনা অনুষ্ঠানে স্বীকৃত হইয়াছেন বলিয়া সংবাদপত্রে যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে। উহার প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছে। ছয়-দফা সম্পর্কে আমার সঙ্গে জনাব ভুট্টোর আলােচনায় সম্মত হওয়ার সংবাদে আমি তাঁহাকে অভিনন্দন জানাইতেছি।
শেখ মুজিব বলেন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আগামী ২৪শে এপ্রিল (রবিবার) পল্টন ময়দানে এক জনসভা আহ্বান করা হইয়াছে। বিষয়টি আলােচনার জন্য জনাব ভুট্টো এই জনসভায় যােগদানের সুযােগ গ্রহণ করিলে আমি আনন্দিত হইব। এইরূপ ক্ষেত্রে ২৪শে এপ্রিলের জনসভাটি মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারী এবং পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারীর যৌথ উদ্যোগে আহ্বানের ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারীকে এজন্য আমি প্রয়ােজনীয় ক্ষমতা দিয়াছি। তদুপরি ২৪শে এপ্রিলের আগেই যদি অনুরূপ জনসভা অনুষ্ঠান জনাব ভুট্টোর পক্ষে সুবিধাজনক মনে হয়, তিনি অনুগ্রহ করিয়া তাহাও আমাদের জানাইতে পারেন।
বিবৃতির উপসংহারে শেখ মুজিব বলেন যে, জনাব ভুট্টো উভয়পক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত একটি নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে সার্বজনীন বয়স্ক ভােটাধিকারের ভিত্তিতে এই প্রশ্নে দেশে গণভােট অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মােহাম্মদ আইয়ুব খানকে সম্মত করাইতে পারিলে আরও ভাল হয়। কারণ, অনুরূপ ক্ষেত্রে জনমত যাচাই-এর একটি সর্বজনগ্রাহ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল বিতর্কের অবসান ঘটান।

বৈঠকের স্থান ও কর্মপদ্ধতি আলােচনা সাপেক্ষ
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জেড, এ, ভুট্টো গতকাল (বুধবার) এ,পি,পি প্রতিনিধির সহিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “শেখ মুজিবর রহমানকে তাঁহার ছয়-দফা প্রশ্নে মােকাবিলা করার জন্য সময়াভাবের দরুন আমি তাহার আমন্ত্রণের আশুতম সুযােগ গ্রহণ করিতেছি। আমার মনে হয়, তিনি আমাকে চলতি মাসের ২৪ তারিখে পল্টন ময়দানের বৈঠকে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানাইয়া সংবাদপত্রে এক বিবৃতি দিয়াছেন। পাকিস্তানের জাতীয় সংহতির পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাদি সম্পর্কে এই ধরনের মােকাবিলার প্রস্তাবকে আমি অভিনন্দন জানাই। কিন্তু চলতি মাসের ১৯ তারিখে আংকারায় সেন্টো সম্মেলনে যােগদানের জন্য এখান হইতে চলিয়া যাওয়ার কর্মসূচী থাকায় ২৪শে এপ্রিল তাহার সংগে আমার বৈঠক অনুষ্ঠান সম্ভব নহে। তবে জনাব মুজিবর রহমানও ২৪শে এপ্রিলের পূর্বেই বৈঠক অনুষ্ঠানে প্রস্তুত থাকায় আমি তাঁহার সঙ্গে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােচনা অনুষ্ঠানে প্রস্তুত রহিয়াছি। আর এজন্যই ১৭ই এপ্রিল আমার করাচী যাওয়ার কথা থাকিলেও আমি ঐদিন যাত্রা স্থগিত রাখিতে এবং ২৪শে এপ্রিলের পরিবর্তে ১৭ই এপ্রিল আমি জনাব মুজিবর রহমানের সংগে বৈঠকে মিলিত হইতে প্রস্তুত রহিয়াছি। আলােচ্য সমস্যাবলী গুরুতর বিধায় এবং তিনি নিজেও ২৪শে এপ্রিলের আগেই বৈঠকে মিলিত হইতে প্রস্তুত থাকায় ১৭ই এপ্রিলের বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব তিনি অভিনন্দিত করিবেন। তিনি আমার প্রস্তাবে রাজী থাকিলে ১৭ই এপ্রিলের বৈঠকের স্থান এবং অন্যান্য কার্যবিধি সম্পর্কে আমার সঙ্গে আলােচনা করিতে পারেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!