You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
১৫ই এপ্রিল ১৯৬৬

‘গণ-সম্পর্কহীন সরকারের পক্ষেই এরূপ সম্ভব’
ফরিদপুরে লেভীর দৌরাত্ম সম্পর্কে শেখ মুজিব

ফরিদপুর, ১৩ই এপ্রিল।-আজ বিকালে স্থানীয় অম্বিকা ময়দানের বিরাট জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান লেভী প্রথা ও টেন্ডু অর্ডিন্যান্সের কঠোর সমালােচনা করিয়া বলেনঃ অভাবঅনটন, পীড়িত এই ফরিদপুর জেলাবাসীদের উপর লেভী ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মত নামিয়া আসিয়াছে। ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে এই লেভী পরিশােধ করিতে না পারিলে দরিদ্র গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা গৃহীত হইবে বলিয়া যে আদেশ জারি হইয়াছে তাহার উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিব বলেন, জনগণের সহিত সম্পর্কহীন সরকারই শুধু দেশবাসীর সহিত এরূপ ব্যবহার করিতে পারে।
তিনি বলেন যে, টে অর্ডিন্যান্সের ফলে প্রদেশের ৭ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক তাঁহাদের প্রায় ৩৫ লক্ষ পৌষ্যসহ অনাহারের সম্মুখীন হইয়াছে। ফরিদপুরও বিড়ি শিল্পের অন্যতম প্রধানকেন্দ্র। কিন্তু অর্ডিন্যান্সের ফলে এখানকার সকল বিড়ি শ্রমিকই নিদারুণ সঙ্কটের মধ্যে নিপতিত হইয়াছে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে
বলেন, ন্যাপ সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করিতেছে বলিয়া প্রচার করা হইতেছে এবং মওলানা ভাসানী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জেহাদের কথা বলিয়া বেড়াইতেছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাঁহাদের কার্যকলাপে সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টদের হস্তই শক্তিশালী হইতেছে।
পাকিস্তানের জনগণ একচেটিয়া পুঁজিপতি ও কার্টেলের শােষণে জর্জরিত। কিন্তু যে সরকার ও মহল উক্ত কার্টেল ব্যবস্থা কায়েম রাখিতেছে তাহাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করিয়া নিজেদের কার্যদ্বারা প্রকারান্তরে তাহারা তাহাদিগকে সমর্থন করিয়া চলিয়াছেন। শেখ মুজিব বলেন, ন্যাপের সমাজতন্ত্রবাদ আজ শুধু প্রােগ্রামেই পর্যবসিত হইয়াছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের মেনিফেষ্টোতে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘােষণা করা হইয়াছে। আওয়ামী লীগ তাহার উক্ত নীতিতে অবিচল থাকিয়া জনগণের স্বার্থ ও অবিচারের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হইয়াছে।
শেখ মুজিব বলেনঃ ৬-দফা কোন দলীয় মেনিফেষ্টো নহে। একদিনে ইহার সাফল্য আসিবে না, জনগণের দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ শ্রমের ফলেই ৬-দফা সফল হইবে। আওয়ামী লীগ যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে ৬-দফা বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে। ৬-দফা সম্পর্কে কোন আপােষ। নাই।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আদিলুদ্দীরে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতাকারী অন্যদের মধ্যে ছিলেন মেসার্স মিজানুর রহমান চৌধুরী এম, এন, এ, জহুর আহমেদ চৌধুরী (শ্রম সম্পাদক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ) এবং ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শামসুদ্দীন মােল্লা।
সভা পণ্ড করার জন্য কনভেনশন লীগের তরফ হইতে পিকেটিং করা, হয়। কিন্তু উহাতে ব্যর্থ হইয়া তাহারা “শেখ মুজিব সভায় আসিবেন না” বলিয়া প্রচারণা চালাইতে থাকে। উহা সত্ত্বেও জনসভায় অবিশ্বাস্য রকম বিপুল লােক সমাগম হয়। দলে দলে লােকের আগমনে অল্পক্ষণের মধ্যেই মাঠ ভর্তি হইয়াও আশেপাশের দালানকোঠার ছাদগুলি, নিকটস্থ রাস্তাসমূহ, পুষ্করিণীর পাড় প্রভৃতি সকল স্থানেই মানুষে মানুষে ছাইয়া যায়। স্থানীয় বিড়ি শ্রমিকসহ সভার অনেক শ্রোতা তাহাদের দাবী-দাওয়া সম্বলিত নানা ধরনের ফেষ্টুনসহ সভায় আগমন করেন। আগামীকাল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশােরের জনসভায় বক্তৃতা করিবেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!