দৈনিক পয়গাম
১৩ই এপ্রিল ১৯৬৬
আসলে ৬ দফা ‘বিক্রয়যােগ্য রাজনৈতিক পণ্য!
শেখ মুজিবের পরস্পর বিরােধী উক্তিতে ভিতরের গুমর ফাঁক
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
কিছুদিন পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একমাত্র দরদীর দাবিদার জনৈক রাজনীতিক পূর্ব পাকিস্তানকে পার্থিব স্বর্গে পরিণত করিবার খায়েশে এক ছয়দফা বটিকা লইয়া রাজনৈতিক মঞ্চে অভিনয়ার্থে আবির্ভূত হন এবং সহযােগী চাটুকারদের সহায়তায় ‘জনগণের মুক্তির সনদ বলিয়া আসর মাতাইতে সচেষ্ট হন। ভাবাবেগ প্রধান পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রতারিত করিবার উদ্দেশ্যে প্রদেশব্যাপী প্রচার অভিযানেরও ব্যবস্থা করেন।
প্রথম যখন ছয় দফা বটিকা পূর্ব পাকিস্তানীদের সেবন করানাের খায়েশে বাজারে ছাড়া হয়, তখনি স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ইহাকে নিছক একটি ভাঁওতা বলিয়া মতামত প্রকাশ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানবাসীকে ছয় দফার ব্যাপারে সতর্ক হইবার জন্য উপদেশ দেন। তাহাদের এই সিদ্ধান্ত যে সত্য তাহা সেই “জনদরদী” নেতা স্বয়ং প্রমাণ করিয়া দিয়াছেন।
সম্প্রতি পাবনাবাসীর সম্মুখে তাহার ছয়দফা বটিকার গুণকীর্তন করিবার কালে তিনি স্বয়ং নিজের থলির বিড়াল বাহির করিয়া দিয়াছেন। বক্তৃতার আবেগে বলিয়া ফেলিয়াছেন যে, কেন্দ্রীয় রাজধানী পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করিলে তিনি ছয় দফার দাবী ত্যাগ করিবেন।
তাহা হইলে তিনি এতদিন যে বলিতেছিলেন “ছয়-দফা পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রাণের দাবী, বাঁচার দাবী” তাহা কি কেবলমাত্র জনগণকে প্রতারিত করিবার উদ্দেশ্যেই বলিতেছিলেন? নাকি রাজধানী স্থানান্তরিত করিলেই পূর্ব পাকিস্তানীদের চাকরীর সংস্থান, ভাত-কাপড়ের সংস্থান হইয়া যাইবে?।
আসল কথা হইতেছে জনগণের মুখপানে চাহিয়া “দরদী নেতা” ছয়দফার মেওয়া বহিয়া আনেন নাই, আনিয়াছেন আপন মুখ পানে চাহিয়া। তিনি ক্ষমতায় বসিতে চাহেন। ইহাই তাহার একমাত্র প্রিয় লক্ষ্যবস্তু।
মনের ভুলে পাবনায় আসল কথাটা বলিয়া ফেলিয়াছেন। “জনগণের প্রাণের দাবী ছয়-দফা” একটি রাজনৈতিক পণ্য ছাড়া আর কিছুই নহে। তাই তিনি রাজধানীর মূল্যে উহা বিকাইতে চাহিয়াছেন।
যখন ভাবাবেগে আসল কথাটা বলিয়া ফেলেন তখন পাঁচসাত ভাবিবার অবসর ছিল না। কিন্তু ঘরে ফিরিয়া মনে পড়িয়াছে যে, বিড়াল তাে বাহির হইয়া পড়িয়াছে কিন্তু এখন কি করা যায়? তাই শাক দিয়া মাছ ঢাকিবার উদ্দেশ্যে এখন কাগজে কাগজে বিবৃতি ছাড়িতেছেন। কিন্তু বাদ সাধিয়াছে নিজের তল্পীবাহক পত্রিকাটি। কেননা, সেই পত্রিকাটাই বগল বাজাইতে বাজাইতে ছয়-দফার বদলে রাজধানী স্থানান্তরিত করণের সংবাদটা দিয়াই সেদিনের কাগজের ব্যানার বানাইয়াছেন। নিজের দড়ি নিজের গলায় আর কাহাকে বলে?
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব