You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.04.10 | গুলী খাওয়ার ও কারাগারে যাওয়ার অধিকার অন্ততঃ দেশবাসীর আছে- সে অধিকারের সদ্ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হউন : পাবনায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১০ই এপ্রিল ১৯৬৬

গুলী খাওয়ার ও কারাগারে যাওয়ার অধিকার অন্ততঃ দেশবাসীর আছে
সে অধিকারের সদ্ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হউন : পাবনায় শেখ মুজিবের
বক্তৃতার অবশিষ্টাংশ
(ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধির তার)

পাবনা, ৭ই এপ্রিল। -(ঢাকায় বিলম্বে প্রাপ্ত) “দেশে জরুরি অবস্থা বহাল রহিয়াছে, পাকিস্তান রক্ষাবিধি চালু আছে এবং উহা ছাড়া আর বহুবিধ বিধিনিষেধ আরােপ করা হইয়াছে। এসব ভালভাবে জানিয়া-শুনিয়াও যে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করা হইয়াছে, উহা নিছক খেয়াল অথবা রাজনৈতিক হৈ-চৈ সর্বস্ব নহে। নির্যাতন-নিপীড়ন যাই আসুক এবং তা যত তীব্র ও প্রচণ্ডই হােক-না কেন, দাবী-দাওয়া আদায়ের প্রশ্নে এবারের সংকল্প একান্তই দুর্বার।”
তুমুল করতালি ও কণ্ঠবিদারী জিন্দাবাদ ধ্বনির মধ্যে শেখ মুজিব আরও ঘােষণা করেনঃ “শাসকদের যেমন গুলী চালনার সুযােগ আছে, বুক পাতিয়া সে গুলী আলিঙ্গনের অধিকারও তেমনি দেশবাসীর আছে; দেশবাসীকে কারাগারে আটকের সুযােগ যেমন শাসকচক্রের আছে, হাসিমুখে কারাযন্ত্রণা ভােগের অধিকারও তেমনি দেশবাসীর আছে। “সদাশয় আইয়ুব সরকার দেশবাসীর সব অধিকার ছিনাইয়া লইলেও অন্ততঃ এ দু’টি অধিকার দেশবাসীর আজও আছে এবং সর্বকাল থাকিবে। অতএব, দেশবাসীর ছয়দফা দাবীও ছিনাইয়া লওয়া অধিকার আদায় করিতে হইলে এই দুটি অধিকারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিবার জন্যই আজ ঘরে ঘরে প্রস্তুত হইতে হইবে।”
তিনি বলেনঃ স্মরণ রাখিবেন, এবার আমাদের সম্মুখে একটিই পথঃ হয় জয়, নয় ক্ষয়।
শেখ মুজিবের উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম পর্যায়ে আজ স্থানীয় টাউন হল ময়দানে আয়ােজিত জনসভাটি আশাতীত সাফল্যের পরিচয়দান করে। শহর ও শহরের বাহিরে দূরবর্তী এলাকা হইতে আগত বিপুল জনতা গভীর আগ্রহ ও মনােযােগ সহকারে বক্তৃতা শ্রবণ করেন। শেখ মুজিব প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় ৬-দফার বিভিন্ন দিক পর্যালােচনা করেন। বিগত ১৭ দিনের পাকভারত যুদ্ধে জাতি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছে, শেখ মুজিব উহাও বিশদভাবে আলােচনা করেন। জাতীয় জীবনের সেই দুর্যোগ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট কেন পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন নাই বা আসিতে পারেন নাই, সেনাবাহিনী প্রধান কেন আসিতে পারেন নাই, দুনিয়ার অন্যান্য অংশের সহিত ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তানের কোন যােগাযােগ কেন ছিল না- ইত্যাদি হপ্রশ্নের অবতারণা করিয়া শেখ মুজিব জনসাধারণকে এগুলি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিচার-বিবেচনা করিয়া দেখিবার আহ্বান জানান। শেখ সাহেব তাঁহার বক্তৃতায় লেভী প্রথা, টেপাতা অর্ডিন্যান্স, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতির তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন যে, সরকার জাতীয় সম্পদকে তাঁহাদের বিলাস-ব্যাসন চরিতার্থ করার জন্য অপচয় করিতেছেন আর অন্যদিকে জনগণ অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাইতেছে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, স্থানীয় কনভেনশন লীগ ও প্রগতির দাবীদার অপর একটি রাজনৈতিক দল যৌথভাবে ৬-দফা বিরােধী প্রচারপত্র ও প্রাচীরপত্র প্রকাশ করেন। তাঁহারা ৬-দফাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা বলিয়া অভিহিত করেন এবং বলেন যে, ইহা একটি মার্কিন ডলারের দ্বারা অনুপ্রাণিত কর্মসূচী।
উপরােক্ত অভিযােগের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন যে, পাবনার জনসভার এই বিপুল জনসমাবেশই প্রতিক্রিয়াশীলদের অভিযােগের সঠিক জবাব দিয়াছে। তথাকথিত প্রগতির ধারকদের তিনি কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করিয়া দেন। তিনি বলেন যে, ক্ষমতাসীনদের সহিত যােগসাজসে জনগণের দাবীকে নস্যাৎ করিতে গেলে জনগণের হাতে এই প্রগতিশীলদের কঠোর পরিণতি ভােগ করিতে হইবে। প্রগতিবাদীদের তিনি বাস্তব অবস্থা অনুধাবনের আহবান জানান। তিনি বলেন যে, তাঁহারা যদি সত্য সত্যই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে চাহেন তাহা হইলে তাহাদের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করিতে হইবে। কারণ, এই সরকারই সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যথায় সাম্রাজ্যবাদবিরােধী শ্লোগানের ভাঁওতাবাজী হইতে বিরত থাকার জন্য তিনি এই প্রগতিশীলদের প্রতি আহবান জানান।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব