দৈনিক ইত্তেফাক
২০শে মার্চ ১৯৬৬
বঞ্চিত বাংলার সন্তান হিসাবে ৬-দফার সংগ্রামী ভাইদের কাতারে
সৈনিক হতে চাই
(স্টাফ রিপাের্টার)
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব আমিনুল ইসলাম চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল, (শনিবার) আওয়ামী লীগে যােগদান করিয়াছেন। ইডেন হােটেল প্রাঙ্গণে পূর্ব ৬-দফা মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ডাক দিয়াছেন। বঞ্চিত বাংলার সন্তান হিসাবে এই ডাকে সাড়া না দিয়া উপায় নাই। তাই আমি ৬-দফার সংগ্রামী ভাইদের কাতারে সামিল হইয়া সৈনিক হইতে চাই।
জনাব আমিনুল ইসলাম চৌধুরী তার আওয়ামী লীগে যােগদানের কথা ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় দেড় সহস্র কাউন্সিলর বিপুল করতালির মাধ্যমে তাহাকে আওয়ামী লীগে বরণ করিয়া নেয়। আনন্দমুখর পরিবেশে জনাব চৌধুরী ঘােষণা করেন যে, ৬-দফা তাঁহার কাছে রাজনৈতিক দাবী নয়, এ দাবী নির্যাতিত মানুষের বাঁচার দাবী। এ দাবী পূর্ব পাকিস্তানের দাবী নয় শুধু এ দাবী পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতিত জনগণেরও দাবী। তাই ৬-দফা দাবী পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য ও সমঝােতা সৃষ্টির দাবী। এ দাবীতে দেশপ্রেমিক মাত্রেরই সাড়া দিতে হইবে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা মানুষের মুক্তি সংগ্রামের পথে বীর সৈনিক। এই বীর সৈনিকদের কাতারে আমিও শামিল হইতে চাই এবং দাবী আদায়ের জন্য সংগ্রাম করিয়া আমার জানমাল কোরবান করিতে আমি প্রস্তুত আছি। জনাব চৌধুরী বর্তমান রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অন্তসারশূন্য বলিয়া বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, যেখানে জনসাধারণের কোন অধিকার নাই সেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন। যে দেশবাসী একদিন বৃটিশের মত পরাক্রমশালী শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম করিয়া স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছে, সেই জনসাধারণকে যে রাজনৈতিক চক্র হীনতম চক্রান্ত করিয়া চরম অপমান করিয়াছে, সেই চক্রের বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রাম গড়িয়া তুলিতে হইবে। এই চক্রকে যুগ-যুগান্তরের মত বুঝাইয়া দিতে হইবে যে, অস্ত্রবল জনবলের চাইতে বড় নয় এবং চিরদিনই জনবলের কাছে চক্রান্তকারীরা পরাভূত হইয়াছে। জনতার শক্তিই আসল শক্তি।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব