দৈনিক পয়গাম
২৭শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬
বিরােধী দলে পরস্পরের প্রতি কাদা ছােড়াছুড়ি
শেখ মুজিবের তথাকথিত ছয় দফার প্রতি মওদুদীর বিষােগার
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য দেশে সুসংবদ্ধ বিরােধী দলের প্রয়ােজনীয়তার উপর বর্তমান রাষ্ট্রনায়কবৃন্দ সবিশেষ গুরুত্ব আরােপ করিয়া আসিতেছেন। কিন্তু আমাদের বিরােধী দলসমূহ একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ প্রচার এবং ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারারই প্রশ্রয় দিতেছে না বরঞ্চ পরস্পরকে ক্ষতবিক্ষত এবং জনসাধারণের নিকট হেয় প্রতিপন্ন করিবার ম্যারাথন প্রতিযােগিতায় মাতিয়া উঠিয়াছে।
পূর্ব পাকিস্তান শােষণের এককালীন স্থপতি এবং বর্তমানে নেজামে ইসলাম নেতা চৌধুরী মােহাম্মদ আলী, মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং শেখ মুজিবরের আওয়ামী লীগের প্রতি জেহাদ ঘােষণা করিয়াছেন। এই ব্যাপারে চৌধুরী মােহাম্মদ আলীকে সহায়তা দান করিতেছেন জামাতে ইসলামী নেতা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী। অপরদিকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি আওয়ামী লীগের বিশেষতঃ শেখ মুজিবরের তথাকথিত ছয় দফা দাবীর বিরুদ্ধে আপােষহীন মনােভাব প্রকাশ করিয়াছেন।
কাউন্সিল মুসলিম লীগও শেখ মুজিবরের দাবীর প্রতি বিরূপ মনােভাব প্রকাশ করিয়াছেন।
আইয়ুব সরকারের ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হইতেই এই দেশের বিশেষতঃ পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখ-দুর্দশার জন্য সর্বাধিক দায়ী ব্যক্তিরা নিজেদের পরিচিত চেহারার উপর নূতন মুখােশ পরাইবার জন্য গােয়েবলসের ধরনে প্রচারণা শুরু করে। কিন্তু তাহাদের সব কৌশল জনসাধারণের নিকট ফাস হইয়া যাওয়ায় এখন বিভিন্ন বিরােধী দল একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগামহীন প্রচারণার ঝড় তুলিয়াছে।
“ঘােলা পানিতে মৎস্য শিকারে ওস্তাদ আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় জীবনে অনৈক্যের বীজ বপনের অভিলাষেই তখাকথিত ছয় দফা দাবী লইয়া হৈ চৈ শুরু করিয়াছে বলিয়া অনেকে মনে করেন। কিন্তু এই দাবীর প্রতি শুধুমাত্র দলীয় কয়েকজন অভিনেতা ছাড়া সমগ্র দেশবাসীর হিমশীতল মনােভাব উপলব্ধি করিতে পারিয়া আওয়ামী নেতারা নাকি এখন নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই সন্ধিহান হইয়া উঠিয়াছেন। এই দাবীর প্রতি দেশের আপামর জনসাধারণের চরম ঔদাসীন্য ছাড়া শেখ মুজিব আর কিছুই অর্জন করিতে সক্ষম হন নাই।
জামাতে ইসলামীর আমীর সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী আবার ১৯৫৪ সালের মত “যুক্তফ্রন্ট গঠনের মিশন লইয়া ঢাকা আগমন করিয়াছেন বলিয়া রাজনৈতিক ওয়াকিফহাল মহলের ধারণা। বিশেষ একটি “শক্তি” দেশের সব বিরােধী দলকে ঐক্যবদ্ধ করিবার জন্যই নাকি যুক্তফ্রন্ট গঠনের এই প্রচেষ্টা চালাইতেছেন।
ঐক্যহীন, শৃংখলাহীন এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাসহীন বিরােধীদলসমূহ যুক্তফ্রন্ট গঠনের কোশেশ চালাইতে গিয়া ‘হালুয়ারুটির ভাগ বাটোয়ারার প্রশ্নে ঐক্যমতে পৌছিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তবু মওদুদী সাহেব যুক্তফ্রন্ট গঠনের কথা বলিতেছেন এবং সম্পূর্ণ অবাস্তব রাজনৈতিক দর্শনের তুবড়ি ফুটাইতেছেন।
বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সার্কাসের খেলােয়াড়দের দড়ির বিপজ্জনক খেলা জনসাধাণের মধ্যে অন্য কিছু না হােক, অন্ততঃপক্ষে হাসির খােরাক যােগাইতে সক্ষম হইয়াছে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব