You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
১৪ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬

আওয়ামী লীগ ভুমিকার প্রতি অভিনন্দন
(ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম অফিস হইতে)

১৩ই ফেব্রুয়ারী- চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব এম, এ, আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুল্লাহ আল হারুণ, দফতর সম্পাদক জনাব এম, এ, হান্নান ও কোষাধ্যক্ষ জনাব জানে আলম দোভাষী অদ্য (রবিবার) এবং যুক্ত বিবৃতিতে বলেনঃ সাম্প্রতিক লাহাের সম্মেলন-এ যােগদানকারী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতিনিধিদলের নেতা জনাব শেখ মুজিবর রহমান ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতিনিধিরা যে সুচিন্তিত ও বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছেন-তাহাতে ইহাই প্রমাণ করে যে, শুধুমাত্র বিরােধিতার খাতিরেই বিরােধিতা করা বা ক্ষমতার লােভে রাজনীতি করা আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য নয় অথবা ঘােলা জলে মাছ শিকার করার প্রবণতা আওয়ামী লীগের নাই।
আমরা আশা করিয়াছিলাম যে, প্রস্তাবিত লাহাের সম্মেলন ‘যুদ্ধপূর্ব, যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তরকালের দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যাদি সত্যের কষ্টিপাথরে বিচার-বিশ্লেষণ করিয়া দেশকে বাস্তবানুগ নেতৃত্বদানের কর্মপন্থা নির্ধারিত করিবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় লাহাের সম্মেলন যে সাম্প্রতিক তাসখন্দ চুক্তির বিরােধিতা করার উদ্দেশ্যেই আহূত হইয়াছিলইহাই প্রমাণ হইল। আমরা মনে করি, তাসখেন্দ চুক্তি সাম্প্রতিক পাক-ভারত ভয়াবহ যুদ্ধেরই ফলশ্রুতি। পাক-ভারত শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগ দলের বহু-আকাংখিত বিলম্বে হইলেও তাসখেন্দ চুক্তি পাকভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সহায়ক হইবে। সুখের বিষয়, ভারতের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উঠিলে যাহারা তাহা বাঁকা চোখে দেখিতেন ও তাহা উহার প্রস্তাবকদের নিন্দা করিতেন, আজ তাহারাও তাসখেন্দ চুক্তির অন্যতম প্রবক্তা। বিলম্বে হইলেও বাস্তবতার চাপে তাহাদের যে চক্ষু খুলিয়াছে ইহাই আশার কথা। আজ দেশের আপামর জনসাধারণ ইহাই বুঝিতে পারিয়াছে যে, কোন গুরুতর সমস্যারই (কাশ্মীর সহ) সমাধানের পথ বল প্রয়ােগ নয়। আর পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধের বিলাসিতাও করিতে পারে না।
লাহাের সম্মেলন এর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করিয়া তাই পূর্ব পাকিস্তান। আওয়ামী লীগ ইহাই প্রমাণ করিল যে, পূর্ব বাংলার সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব সঠিক পথেই পরিচালিত হইতেছে। তাই আমরা জনাব মুজিবর রহমান সাহেবকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করিতেছি। পরিশেষে আমরা জনসাধারণের কাছে আবেদন করিব, লাহাের সম্মেলনে শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক দাবীকৃত ছয় দফা, যথা পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, আঞ্চলিক রক্ষাব্যবস্থা ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিধিব্যবস্থা, পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থা ইত্যাদি কায়েম করার জন্য দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়িয়া তুলুন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!