দৈনিক পাকিস্তান
১৭ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬
পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা তাসখন্দ ঘােষণার আসল তাৎপর্য বুঝিতে পারেন নাই
মুজিবের প্রস্তাবে পাকিস্তানের সংহতি বিরােধী বীজ রহিয়াছে : মওদুদী
(স্টাফ রিপাের্টার)
জামাতে ইসলামীর আমীর মওলানা আবুল আলা মওদুদী গতকল্য সন্ধ্যায় করাচী হইতে ঢাকা আগমনের পর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে, তাসখন্দ ঘােষণার আসল তাৎপর্য উপলব্ধি করিতে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সক্ষম হন নাই। তিনি এখন তাহাদের ইহার তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করানাের চেষ্টা করিবেন।
তিনি বলেন যে, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তাঁহারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করার চেষ্টা করিতেছেন। তবে সম্প্রতি লাহােরে অনুষ্ঠিত “জাতীয় সম্মেলনে” তাসখন্দ ঘােষণা সম্পর্কে যে প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে, যুক্তফ্রন্টের প্রতিটি দলকে তাহা অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে। অন্যথায় সম্মিলিত বিরােধী দলীয় আন্দোলনের ক্ষতি হইবে।
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের ৬-দফা প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, লাহাের সম্মেলনের চারটি দলই নীতিগতভাবে উহার বিরােধী। চারটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ রহিয়াছে কিনা তাহা জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলেন যে, নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানকে যদি আওয়ামী লীগের প্রধান মুখপত্র হিসাবে ধরা যায় তাহা হইলে চারটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগও রহিয়াছে।
মওলানা মওদুদী আরও বলেন, উপরােক্ত প্রস্তাবে পাকিস্তানের সংহতি বিপন্ন হওয়ার বীজ রহিয়াছে।
কোন কর্মসূচীর ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হইবে, তাহা জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলেন যে, আগে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হইবে, পরে কর্মসূচী ঠিক করা হইবে।
কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের প্রশ্নে তাঁহার মত জানিতে চাওয়া হইলে তিনি বলেন যে, ১৯৬৬ সালের শাসনতন্ত্র এই সম্পর্কে মােটামুটি পন্থা নির্দিষ্ট করা আছে। উহা অপেক্ষা অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়ােজন হইলে তাহা করা হইবে বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
মওলানা সাহেব বলেন যে, ভারত কর্তৃক পাকিস্তান আক্রান্ত হয় নাই বলিয়া একশ্রেণীর রাজনীতিক যে মত ব্যক্ত করিতেছেন, তিনি তাহা সমর্থন করেন না। এই যুদ্ধ পাকিস্তানের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। নিজস্ব দেশ রক্ষার জন্য পাকিস্তানকে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ শুরু করিতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল।
যুক্তফ্রন্টে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির যােগদানের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলিয়া তিনি জানান। কারণ, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহিত ন্যাপের আদর্শগত ব্যাপক পার্থক্য রহিয়াছে এবং এই কারণেই তাহাদের লাহাের সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানাে হয় নাই।
তিনি অতঃপর বলেন যে, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি চৌধুরী মােহাম্মদ আলী, কাউন্সিল মুসলিম লীগের শওকত হায়াত খানা ও আওয়ামী লীগ প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তান সফরে আগমন করিবেন। তাহারা তাসখন্দ ঘােষণার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে জনমত গঠন করার চেষ্টা করিবেন।
পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকালে জামাতে ইসলামীর নেতা মওলানা মওদুদী চট্টগ্রাম, খুলনা ও দিনাজপুর জামাত সম্মেলনে যােগদান করিবেন। এছাড়া তিনি আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় এক জনসভায় বক্তৃতা করিবেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব