You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পাকিস্তান
১২ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬

লাহাের সম্মেলনের কতিপয় উদ্যোক্তা
বিরােধী দলীয় আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে ॥
অতীতের সরকারসমূহের এই বিশেষ চক্রই দেশের
বর্তমান দুরবস্থার জন্য সর্বতােভাবে দায়ী : শেখ মুজিব

গতকল্য শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান বিরােধী দলের একটি বিশেষ গােষ্ঠীর সমালােচনা করিয়া বলেন, অতীতে ইহারা বহুদিন ক্ষমতাসীন ছিল এবং দেশ আজ যে দুরবস্থার সম্মুখীন হইয়াছে তজ্জন্য ইহারাই দায়ী।
তিনি সম্প্রতি সমাপ্ত লাহাের সম্মেলনের কয়েকজন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে দেশে সম্মিলিত বিরােধী দলীয় আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযােগ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, সম্মিলিত বিরােধী দল গঠন করাই ছিল লাহাের সম্মেলনের মুখ্য উদ্দেশ্য।
পিপিএ পরিবেশিত উক্ত খবরে প্রকাশ, তিনি বলেন যে, তাঁহার ছয় দফা প্রস্তাব সম্পর্কে উক্ত নেতৃবর্গ অযৌক্তিক মনােভাব গ্রহণ করায় তাহার দল উক্ত সম্মেলনের প্রস্তাবের সহিত জড়িত হয় নাই।
তিনি বলেন, বিরােধী দলের এই কোটারীই এক সময় ক্ষমতার আসন অধিকার করিয়াছিল এবং দেশের আজিকার দুর্দিনের জন্য ইহারাই দায়ী।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন, লাহাের সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের মৌল সমস্যাবলী সম্পর্কে আলােচনা করা হইবে এইরূপ প্রতিশ্রুতি লাভ করিয়া তিনি লাহাের সম্মেলনে যােগদান করিয়াছিলেন। কিন্তু বিরােধী দলের উক্ত কোটারী তাহার ছয় দফা প্রস্তাব অংকুরেই বিনষ্ট করার প্রয়াস প্রায়। ইহার পরিণতি হিসাবে তাহার ছয় দফা প্রস্তাব সম্মেলনে উত্থাপন করা যায় নাই।
প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী বলেন, তিনি বিষয় নির্ধারণী কমিটির বৈঠকে উক্ত ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু উক্ত কোটারী তাহার প্রস্তাব আলােচনা করিতেও রাজী হন নাই।
নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান উক্ত কোটারীতে আছেন কিনা প্রশ্ন করা হইলে তিনি বলেন, ইহা তিনি জানেন না।
শেখ মুজিবর রহমান দুঃখ করিয়া বলেন, তাহার ছয় দফা প্রস্তাব সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানের একশ্রেণীর সংবাদপত্র পাঠকদের এইরূপ ধারণা দানের প্রয়াস পাইয়াছে যে, তিনি পশ্চিম পাকিস্তান হইতে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার পক্ষপাতী।
শেখ মুজিব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘােষণা করেন যে, ভারতের সহিত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ যে নজীরবিহীন দেশপ্রেমের পরিচয় দান। করিয়াছে তাহাতে এই ধরনের সকল আশংকার নিরসন ঘটিয়াছে।
তাহার প্রথম দফা প্রস্তাবের মধ্যে ১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান ফেডারেল সরকার গঠন, পার্লামেন্টারী ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা, সরাসরি ও সার্বজনীন ভােটাধিকারের ভিত্তিতে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচনের সুপারিশ করা হইয়াছে। দ্বিতীয় দফা প্রস্তাবে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া আর সকল বিষয় প্রদেশের হাতে ছাড়িয়া দেওয়ার সুপারিশ করা হইয়াছে।
তৃতীয় দফা প্রস্তাবে পৃথক বিনিময়যােগ্য মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন কিংবা পুঁজি পাচার বন্ধের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্বলিত একই মুদ্রা চালুর সুপারিশ করা হইয়াছে।
অন্যান্য প্রস্তাবের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের পৃথক অর্থ ও আর্থিক নীতি গ্রহণ প্রত্যেক প্রদেশের জন্য বৈদেশিক বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা, অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রদেশের হাতে অর্পণ প্রভৃতির সুপারিশ করা হইয়াছে। অন্যান্য প্রস্তাব নিম্নরূপঃ
ফেডারেল সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা প্রদেশসমূহ সমান হারে কিংবা সকলে গ্রহণযােগ্য হারে প্রদান করিবে।
দেশজ পণ্যদ্রব্য বিনা করে বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে সরবরাহ করা হইবে।
প্রদেশসমূহকে বিদেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণ ও বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে আলােচনার শাসনতান্ত্রিক অধিকার দিতে হইবে।
দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনী কিংবা আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের জন্য প্রদেশসমূহকে শাসনতান্ত্রিক অধিকার দিতে হইবে।
শুল্ক, কর ইত্যাদি আরােপের পূর্ণ অধিকার প্রদেশসমূহকে প্রদান করিতে হইবে। ফেডারেল সরকারের প্রয়ােজনীয় ব্যয় মিটানাের জন্য উহার অংশ ফেডারেল সরকারকে প্রদান করা হইবে। সকল প্রদেশের প্রদেয় অর্থের পরিমাণ একই হারে হইবে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!