You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
২৯শে জানুয়ারী ১৯৬৬

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দুই দফা অভিযােগে শেখ মুজিবের দুই বছর কারাদণ্ড :
জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করিয়া কারাগারে প্রেরণ
হাইকোর্ট কর্তৃক কারারুদ্ধ নেতাকে জামিনে মুক্তিদান : জেলগেটে বিপুল সম্বর্ধনা
(হাইকোর্ট রিপাের্টার)

ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম, বি, আলম গতকল্য (শুক্রবার) আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহাত্মক বক্তৃতাদানের অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত করিয়া পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪(ক) ধারামতে এক বৎসর এবং আপত্তিকর বক্তৃতাদানের জন্য জননিরাপত্তা আইনে ৭(৩) ধারামতে আরও এক বৎসর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। উভয় দণ্ডাদেশই একসঙ্গে চলিবে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, চলতি মাসের ৪ঠা তারিখে এই মামলার রায় ঘােষণার তারিখ ধার্য ছিল। উক্ত তারিখে এবং পরবর্তী আরও ২টি তারিখে (১০ই এবং ১৭ই জানুয়ারী) এই মামলার রায় প্রদান স্থগিত থাকে। শেখ মুজিবরের বিরুদ্ধে আনীত এই মামলার রায় শােনার জন্য অন্যান্য দিনের ন্যায় গতকল্য কোর্টেও কাজ শুরু হওয়ার পূর্ব হইতেই বহুলােক কোর্টে আসিয়া জমায়েত হয়। বেলা পৌনে ১২টায় হাকিম যখন রায় ঘােষণা করেন তখন কোর্ট লােকে পরিপূর্ণ ছিল। রায় ঘােষিত হওয়ার পরেই উক্ত কোর্টে হাইকোর্টে আপীল সাপেক্ষে শেখ মুজিবরের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন পেশ করা হইলে কোর্ট তাহা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে শেখ সাহেবকে কোর্ট হইতেই সরাসরি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে লইয়া যাওয়া হয়। শেখ সাহেবকে কারাগারে লইয়া যাওয়ার পরক্ষণেই হাইকোর্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের এবং অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন করা হয়। বিচারপতি আর, টি, তালুকদার উক্ত আবেদন গ্রহণ করিয়া শেখ মুজিবরকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তির আদেশ প্রদান করেন। হাইকোর্টেও জামিনের প্রেক্ষিতে শেখ সাহেব গতকল্য সেন্ট্রাল জেল হইতে মুক্তিলাভ করেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, এই মামলায় শেখ মুজিবরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগে বলা হয় যে, ১৯৬৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে জননেতা মরহুম হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুতে আহূত সর্বদলীয় শােকসভায় শেখ মুজিবর রহমান যে বক্তৃতা করেন উহাতে আইনতঃ প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে উত্তেজিত ও তাঁহাদের মনে সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হইয়াছে বা করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে বলিয়া পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অনুমােদনক্রমে ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার জনাব মােহাম্মদ ইসা এক অভিযােগ আনয়ন করিলে এই মামলার সূত্রপাত হয়। সরকারপক্ষে এই মামলায় মােট ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গৃহীত হয়। ডেপুটি কমিশনারের কোর্টে আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মের্সাস আবদুস সালাম খান, জহিরুদ্দীন, আবুল হােসেন, খােন্দকার মাহাবুব হােসেন, মােহাম্মদ উল্লা, তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ ও সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব এম, এ, সালাম। পক্ষান্তরে, হাইকোর্টে শেখ সাহেবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব আবদুস সালাম খান এবং তাঁহাকে মামলা পরিচালনা করিতে সাহায্য করেন জনাব সিরাজুল হক, জনাব এম, এ, রব, জনাব কাজী গােলাম মাহবুব, জনাব জালাল উদ্দিন, জনাব হাবিবুর রহমান শরীফ প্রমুখ আইনজীবী।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!