You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.01.29 | রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগে শেখ মুজিব দণ্ডিত : হাইকোর্ট কর্তৃক জামিনে মুক্তিদান | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
২৯শে জানুয়ারী ১৯৬৬

রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগে শেখ মুজিব দণ্ডিত : হাইকোর্ট কর্তৃক জামিনে মুক্তিদান
(ষ্টাফ রিপাের্টার)

গতকল্য শুক্রবার ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম বি আলম পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগে আনীত মামলার রায় প্রদান করিয়া তাহাকে এক বৎসরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
আদালত শেখ মুজিবর রহমানকে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪(ক) ও পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সের ৭(৩) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করিয়া প্রত্যেকটি অপরাধের জন্য এক বৎসর করিয়া মােট দুই বৎসরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। তবে উভয় কারাদণ্ডই একযােগে চলিবে বলিয়া মামলার রায়ে বলা হয়।
মামলার রায় ঘােষণার পরেই শেখ মুজিবর রহমানের কৌসুলী হাইকোর্টে আপীল দায়ের সাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালের জন্য শেখ মুজিবরের জামিনের আবেদন করিলে জনাব এম বি আলম তাহা নাকচ করিয়া দেন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে গতকল্য অপরাহ্নেই হাইকোর্টে জামিনের আবেদন পেশ করা হইলে হাইকোর্ট তাহা মঞ্জুর করেন এবং শেখ মুজিবর রহমানকে জামিনে মুক্তিদানের নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, ১৯৬৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ঢাকার আউটার ষ্টেডিয়ামে জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুতে আহূত এক শােকসভায় শেখ মুজিবর রহমান বক্তৃতা করেন। উক্ত বক্তৃতায় শেখ মুজিবর রহমান আইনত প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে উত্তেজিত এবং তাহাদের মনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করিয়াছেন এই মর্মে ঢাকার পুলিশ অভিযােগ আনয়ন করিলে উক্ত মামলার সূত্রপাত হয়।
শুনানীর পর গত ২৯ শে ডিসেম্বর বুধবার মামলার সওয়াল জওয়াব সমাপ্ত হয়। সরকার পক্ষ হইতে পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আলীম শেখ মুজিবর রহমানের সংশ্লিষ্ট বক্তৃতার আপত্তিকর অংশটির এক অনুলিপি আদালতে পেশ করিয়া বলেন যে, বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি জনসাধারণের মনে আইনত প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করিয়াছেন। সরকারবিরােধী উক্ত বক্তৃতা আইনত দণ্ডনীয় বলিয়া তিনি দাবী করেন।
আসামীপক্ষের প্রধান কৌসলী এডভােকেট আবদুস সালাম খান বলেন যে, সরকার পক্ষের সাক্ষীদের মতে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট জনসভায় শেখ মুজিবর রহমান প্রায় অর্ধঘণ্টা ব্যাপী বক্তৃতাদান করেন। কিন্তু সরকার পক্ষ আদালতে তাহার সম্পূর্ণ বক্তৃতা পেশ করেন নাই। এমতাবস্থায় তাঁহার বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণ ছাড়া উহার অংশবিশেষ দ্বারা বিচারানুষ্ঠান সম্ভব নহে।
গতকল্য শুক্রবার ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম বি আলম ২১ পৃষ্ঠাব্যাপী মামলার রায়ে শেখ মুজিবর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া উপরােক্ত দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। মামলার রায় প্রদানের পরেই শেখ মুজিবর রহমানকে সেন্ট্রাল জেলে লইয়া যাওয়া হয়। কিন্তু অপরাহ্নে হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁহাকে পুনরায় জামিনে মুক্তি প্রদান করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব