দৈনিক পয়গাম
৩রা এপ্রিল ১৯৬৫
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম দলীয় কোন্দল
শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বীতশ্রদ্ধ হইয়া দল ত্যাগের হিড়িক
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
শেখ মুজিবরের হটকারী এবং ঔদ্ধত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যকলাপের ফলে বীতশ্রদ্ধ হইয়া প্রদেশের বিভিন্ন জেলার রুচিশীল এবং শিক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলত্যাগের হিড়িক পড়িয়া গিয়াছে।
প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা হইতে পাইকারী হারে আওয়ামী লীগ নেতাদের দল ত্যাগের যে সংবাদ পাওয়া যাইতেছে তাহাতে অচিরেই এই প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটিবার সম্ভাবনা প্রকট হইয়া দেখা দিয়াছে।
স্পেনের ফ্রাঙ্কোর মত রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী শেখ মুজিবর রহমানের বিগত নির্বাচনকালে হটকারী নীতির ফলশ্রুতি হিসাবে দেশপ্রেমিক কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক নৈরাশ্য ও হতাশা সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া সংশ্লিষ্ট সূত্র হইতে জানা গিয়াছে।
উক্ত মহল মনে করেন যে, মরহুম শহীদ সােহরাওয়ার্দীর পর যােগ্য নেতৃত্বের অভাব আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানে প্রকট হইয়া দেখা দিয়াছে। ফলে এই জাতীয় পরিস্থিতিতে সৎ রাজনৈতিক চিন্তাশীল আওয়ামী নেতাদের নিকট উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পর্ক বজায় রাখা মানহানিকর বলিয়া অনুভূত হইতেছে।
খুলনা ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার পর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের স্তম্ভ বলিয়া পরিচিত তিনজন আওয়ামী নেতার দল ত্যাগের ফলে প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংসের কিনারায় আসিয়া উপনীত হইয়াছে।
পদত্যাগী তিনজন নেতা একযুক্ত বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সহিত তাঁহাদের সর্বপ্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করিবার ঘােষণা প্রকাশ করিয়াছেন।
পদত্যাগকারী তিনজন আওয়ামী নেতা হইতেছেন প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ কাউন্সিলার এবং চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য জনাব কবির আহমদ মিয়া এল, এল, বি, চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য জনাব জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, এম, এ, এল, এল, বি এবং ডবলমুরিং থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য জনাব আবদুর রশীদ চৌধুরী, এম এ, এল, এল, বি।
যুক্ত বিবৃতিতে তাঁহারা বলেন যে, বিগত নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হইয়া উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা শােভন হইবে বিধায় আমরা পদত্যাগ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব