You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
৬ই মে ১৯৬৫

শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হাইকোর্ট কর্তৃক
স্থানান্তরের আবেদন নাকচ

(হাইকোর্ট রিপাের্টার)
গতকল্য বুধবার ঢাকা হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম, বি, আলমের আদালতে বিচারাধীন দেশদ্রোহিতা মামলা স্থানান্তরের আবেদনকে নাকচ করিয়া দিয়াছেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, ১৯৬৪ সালের ১৯শে মে তারিখে জনাব আলমের আদালতে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে এই মর্মে এক অভিযােগপত্রে দাখেল করা হয় যে, তিনি ১৯৬৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা আউটার ষ্টেডিয়ামে আয়ােজিত এক জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে আস্থাহীন, বিমুখ ও উত্তেজিত করিবার জন্য আপত্তিকর এক বক্তৃতাদান করায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনের ৭ ধারা এবং পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারা লংঘন করিয়াছেন। অতএব তিনি দেশদ্রোহিতার অপরাধে দোষী। এই আবেদনপত্র গ্রহণ করিয়া অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব আলম শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে উপরােক্ত আইন ভঙ্গের জন্য সমন জারি করেন। শেখ মুজিবর রহমান জনাব আলম সমীপে হাজির হইয়া তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র হস্তগত করিবার নিমিত্ত সময়ের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাহার উপরােক্ত আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়।
শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষ হইতে হাইকোর্টে পেশকৃত আবেদনপত্রে বলা হয় যে, তাঁহার স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র হস্তগত করিবার উদ্দেশ্যে সময়ের অত্যন্ত প্রয়ােজন থাকা সত্ত্বেও সময়প্রাপ্তির আবেদনকে উপরােক্ত আদালত নামঞ্জুর করিয়াছেন। তাছাড়া তাহার পক্ষ হইতে ঘােরতর আপত্তি সত্ত্বেও আইনতঃ গ্রহণযােগ্য নয় এইরূপ অবৈধ সাক্ষ্যও তাহার বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হয়। ইহাতে আবেদনকারীর মনে এই সন্দেহ ও ভয়ের উদ্ভব হইয়াছে যে, তাহার বিরুদ্ধে আনীত মামলায় উপরােক্ত আদালত কর্তৃক পক্ষপাতহীন বিচার তিনি আশা করিতে পারেন না।
অতঃপর এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ফৌজদারী আইনের ৫২৬ ধারা মােতাবেক হাইকোর্টে এই মর্মে এক আবেদনপত্র পেশ করেন যে, উপরােক্ত অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারের আদালত হইতে তাহার ঘােষণা অদ্য যে কোন ক্ষমতাসম্পন্ন আদালতে স্থানান্তর করা হউক।
কিছুদিন পূর্বে ঢাকা হইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ উপরােক্ত অভিযােগপত্র গ্রহণ করিয়া সরকারের উপর এই মর্মে কারণ দর্শাইবার জন্য এক রুল জারি করিয়াছিলেন যে, আবেদনকারী শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত মামলা যাহা বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব আলমের আদালতে বিচারাধীন, তাহা কেন ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোন আদালতে স্থানান্তর করা হইবে না?
উপরােক্ত আবেদনপত্র বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব আবদুস সােবহান চৌধুরী সমবায়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ সবিস্তারে শুনিয়া বাতেল করিয়া দিয়াছেন।
আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মিঃ এস, আর, পাল ও এস, এস, হালদার। সরকারের পক্ষে ছিলেন জনাব আবদুল হাকিম ডি, এল, আর ও তাহাকে সাহায্য করেন জনাব নইমউদ্দিন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!