দৈনিক ইত্তেফাক
২৭শে মার্চ ১৯৬৫
শেখ মুজিবের মামলা
হাইকোর্টে কৌসুলীদের যুক্তি প্রদর্শনের বিবরণ
ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি হাইকমিশনারের আদালতে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪-ক ধারা মােতাবেক আনীত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নাকচ অথবা অন্য আদালতে স্থানান্তরের জন্য ঢাকা হাইকোর্টে যে আবেদন করা হইয়াছিল, বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব এ, সােবহান চৌধুরী সমবায়ে গঠিত ঢাকা হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার তাহা নাকচ করিয়াছেন (আংশিক বিবরণ গতকল্যকার ইত্তেফাকে প্রকাশিত হইয়াছে)।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, গত ৫ই নবেম্বর ঢাকার পুলিস সুপার কর্তৃক ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারের আদালতে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪-ক ধারা মােতাবেক দেশদ্রোহিতার অভিযােগে এক মামলা দায়ের করা হয়। আবেদনকারী উপরােক্ত মামলা নাকচ অথবা উপরােক্ত ডেপুটি কমিশনারের আদালত হইতে অন্য আদালতে স্থানান্তরের জন্য ঢাকা হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ ইতিপূর্বে আবেদনকারীর অনুকূলে রুল প্রদান করেন।
আবেদনকারীর কৌসুলী মিঃ সবিতা রঞ্জন পাল তাঁহার সওয়াল-জবাবে বলেন যে, পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪-ক ধারা পাকিস্তান শাসনতন্ত্রের পরিপন্থী; সুতরাং ১২৪-ক ধারা মােতাবেক আনীত মামলার আইনগত কোন সত্তা নাই।
মিঃ পাল আরও বলেন যে, এই মামলা নাকচযােগ্য কিনা, এই প্রশ্নে আদালত যদি কোন অভিমত প্রকাশ করিতে অনিচ্ছুক হন, তবে তিনি মামলা স্থানান্তর করিবার আবেদন করিবেন। কারণ এই মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুতরাং ম্যাজিষ্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত মুন্সেফী আদালতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রশাসন বিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে এই মামলার বিচার হওয়া সমীচীন নয়।
সরকারপক্ষের কৌসুলী ডি, এল, আর জনাব আবদুল হাকিম বলেন যে, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহ মামলা নাকচকরণ, অন্যথায় স্থানান্তরকরণের আবেদন আইনতঃ সমর্থনযােগ্য নয়। এই মামলা দায়ের করিবার পূর্বে সরকারপক্ষকে উপযুক্ত সময়ের নােটিস প্রদান করা হয় নাই।
তিনি আরও বলেন যে, এইরূপ আবেদন প্রথমে দায়রা জজের আদালতে করা উচিত ছিল। আবেদনকারী দায়রা জজের আদালতকে বাদ দিয়ে সােজাসুজি হাইকোর্টে আবেদন করিয়াছেন। সুতরাং এইরূপভাবে মামলা স্থানান্তরের আবেদন আইনতঃ গ্রাহ্য নহে।
তিনি আরও বলেন যে, মামলার পূর্ণ শুনানী আরম্ভ হইবার পূর্বেই আবেদনকারী মামলা নাকচ অথবা স্থানান্তরের আবেদনপত্র পেশ করেন, ইহা খুবই অপ্রাসঙ্গিক হইয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, আবেদনকারীর মামলা স্থানান্তর অথবা নাকচকরণের আবেদনপত্র ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১-ক ধারা মােতাবেক পেশ করা হইয়াছে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৪-ক ধারা মােতাবেক প্রদত্ত ক্ষমতা হাইকোর্ট শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করিয়া থাকেন। সর্বক্ষেত্রে উপরােক্ত ধারার প্রদত্ত ক্ষমতার প্রয়ােগ বাঞ্ছনীয় নহে।
তিনি আরও বলেন যে, শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহ মামলার বিরুদ্ধে আপীল করার বিধান আছে। এইরূপ মামলার শুনানী চলাকালে আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে কোন অভিযােগ আনিলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৫ এবং ৪৩৯ ধারার মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন যে, এই দেশদ্রোহ মামলা নাকচ করিবার আবেদন উপরােক্ত ধারা দুইটির মাধ্যমে পেশ করা হয় নাই। সুতরাং এই নাকচকরণ আবেদন আইনতঃ গ্রাহ্য নহে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব