দৈনিক ইত্তেফাক
১৯শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৫
শেখ মুজিবের মামলা
তৃতীয় দিনের শুনানীতে সরকার পক্ষের সওয়াল জওয়াব
(হাইকোর্ট রিপাের্টার)
গতকল্য (বৃহস্পতিবার) ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব এ, সােবহান চৌধুরী সমবায়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহ মামলায় তৃতীয় দিবসের শুনানী হয়। এইদিন সরকারপক্ষের কৌসুলী ডি, এল, আর, জনাব আবদুল হাকিম সারাদিনব্যাপী সওয়াল জবাব করেন। তিনি বলেন যে, এই মামলা আইনতঃ সমর্থনযােগ্য নয়। কারণ, এই মামলা দায়ের করিবার পূর্বে সরকারপক্ষকে উপযুক্ত সময়ের নােটিস প্রদান করা হয় নাই।
তিনি আরও বলেন যে, এইরূপ মামলা প্রথমে দায়রা জজের আদালতে করা উচিত ছিল। আবেদনকারী দায়রা জজের আদালতকে বাদ দিয়া সােজাসুজি হাইকোর্টে আবেদন করিয়াছেন, সুতরাং এইরূপভাবে মামলা স্থানান্তরের আবেদন আইনতঃ গ্রাহ্য নহে। তিনি আরও বলেন যে, ডেপুটি কমিশনারের আদালতে উপরােক্ত মামলার পূর্ণ শুনানী আরম্ভ হইবার পূর্বেই আবেদনকারী মামলা নাকচ অথবা স্থানান্তরের আবেদনপত্র পেশ করেন। ইহা খুবই অপ্রাসঙ্গিক হইয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, আবেদনকারীর মামলা নাকচ অথবা স্থানান্তর করিবার আবেদনপত্র ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ (ক) ধারা মােতাবেক পেশ করা হইয়াছে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ (ক) ধারা মােতাবেক প্রদত্ত ক্ষমতা হাইকোর্ট শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করিয়া থাকেন। সর্বক্ষেত্রে উপরােক্ত ধারায় অর্পিত ক্ষমতার প্রয়ােগ বাঞ্ছনীয় নহে।
তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহ মামলার বিরুদ্ধে আপীল করার বিধান আছে। এইরূপ মামলার শুনানী চলাকালে আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে কোন অভিযােগ থাকিলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৫ এবং ৪৩৯ ধারাদ্বয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন যে, এই দেশদ্রোহ মামলা নাকচ করিবার আবেদনপত্র উপরােক্ত ধারা দুইটির মাধ্যমে পেশ করা হয় নাই। সুতরাং, এই নাকচকরণ আবেদনপত্র আইনতঃ গ্রাহ্য নহে।
অদ্য (শুক্রবার) মামলার শুনানী পুনরায় শুরু হইবে।
আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মিঃ সবিতা রঞ্জন পাল এবং তাঁহাকে মামলা পরিচালনায় সাহায্য করেন মিঃ বি, বি, রায় চৌধুরী এবং মিঃ সুধাংশু শেখর হালদার।
সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ডি, এল, আর, জনাব আবদুল হাকিম এবং জনাব মাসুদ।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব