You dont have javascript enabled! Please enable it! 1965.02.08 | জলিরপাড় ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া গােপালগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম- শেখ মুজিবের অভিজ্ঞতা বর্ণনা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
৮ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৫

জলিরপাড় ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া গােপালগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম
শেখ মুজিবের অভিজ্ঞতা বর্ণনা

গতকল্য (রবিবার) পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বলেন যে, গত ২রা ফেব্রুয়ারী গােপালগঞ্জ হইতে ১৪ মাইল দূরে জলিরপাড়ে সংঘটিত একটি গােলযােগকে উপলক্ষ করিয়া গােপালগঞ্জ টাউনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হইয়াছে। পি, পি, এ পরিবেশিত উক্ত সংবাদে বলা হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্যই গােপালগঞ্জ হইতে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ অফিসে সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে, জলিরপাড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি সম্মেলন বানচাল করার জন্য বেশকিছু সংখ্যক ভাড়াটিয়া লােক যে ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়, উহাতে তথায় গুরুতর গােলযােগ দেখা দেয় এবং এই ঘটনাকে উপলক্ষ করিয়া ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও ১৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, এই ঘটনায় আহত ৭ ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। তিনি আরও বলেন যে, অভিযুক্তদের তালিকায় শতাধিক ব্যক্তি রহিয়াছে। গতকল্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ অফিসের এক প্রেস রিলিজে বলা হয় যে, জলিরপাড়ে ‘সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ নামে একটি নয়া প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য আহূত সংখ্যালঘু সম্মেলনকে বানচাল করার জন্য কনভেনশন লীগ বহু ভাড়াটিয়া গুণ্ডা নিয়ােগ করে। অবশ্য ইহাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইলেও সম্মেলন প্যাণ্ডেলের বাহিরে ইহারা যে গােলযােগ সৃষ্টি করে উহার ফলে বহুলােক আহত হয়। ঘটনার এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে নাই। সম্মেলনের পরে গােপালগঞ্জ মহকুমার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ বিরােধী দলের বহুলােকের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়। ইহাদের মধ্যে রহিয়াছেন (১) মােল্লা জালালুদ্দিন আহমদ, এডভােকেট, সদস্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ; (২) মিঃ গৌরচন্দ্র বালা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও সহ-সভাপতি, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ (৩) নগেন্দ্রনাথ তালুকদার, প্রাক্তন এম, পি, এ ও সহ-সভাপতি, সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট; (৪) আশুদেব দাস, এম, ই, সি ও সহ-সভাপতি, সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট; (৫) নিত্যগােপাল মজুমদার; চেয়ারম্যান, জলিলপুর ইউ, সি; (৬) মনােরঞ্জন হীরা, এম, ই, সি ও সভাপতি, সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট; (৭) মুকুন্দ লাল সরকার, সহ-সভাপতি, মহকুমা আওয়ামী লীগ, গােপালগঞ্জ ও সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (৮) সন্তোষ কুমার বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক, গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (৯) চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস, চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন কাউন্সিল ; (১০) নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, এম, ই, সি; (১১) ডাঃ নিরদচন্দ্র মজুমদার; (১২) মুকুন্দ লাল বিশ্বাস; (১৩) খগেন্দ্রনাথ বৈরাগী, এম, ই, সি; (১৪) ওয়াহিদুল হক ও (১৫) মােহাম্মদ সলিম, কলেজ ছাত্র।
অতঃপর মােল্লা জালালউদ্দীন, খগেন্দ্রনাথ বৈরাগী ও ভুবনমােহন ভক্তকে গ্রেফতারের পর গােপালগঞ্জ টাউন জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে গত ৫ই ফেব্রুয়ারী আশুদেব দাসকে গ্রেফতার করা হয় ও পরদিন শনিবার তাহার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়।
সম্মেলন স্থানের বাহিরে গােলযােগের জন্য সম্মেলনের উদ্যোক্তা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করিয়া প্রকৃতপক্ষে সমগ্র গােপালগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হইয়াছে। আসন্ন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করার খেল শুরু করা হইয়াছে। এই হয়রানি বন্ধ করা না হইলে সমগ্র গােপালগঞ্জে আসন্ন নির্বাচন প্রহসনে পর্যবসিত হইবে বলিয়া প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব