You dont have javascript enabled! Please enable it! 1965.01.17 | সম্মিলিত বিরােধী দলের বৈঠক শুরু | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
১৭ই জানুয়ারী ১৯৬৫

সম্মিলিত বিরােধী দলের বৈঠক শুরু

করাচী, ১৬ই জানুয়ারী (এ, পি, পি)। -অদ্য সন্ধ্যায় ফ্ল্যাগষ্টাফ হাউসে সম্মিলিত বিরােধী দলের ২ দিবসব্যাপী তৃতীয় সম্মেলন শুরু হইয়াছে। অদ্যকার অধিবেশন ১ ঘণ্টারও বেশী সময় স্থায়ী হয়। আগামীকল্য পুনরায় সম্মেলনের অধিবেশন বসিবে।
সম্মিলিত বিরােধী দলের ৫টি অঙ্গদলের মােট ২৫ জন প্রতিনিধি উক্ত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সহ-সভাপতি শেখ আবদুল মজিদ সিন্ধী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
সম্মিলিত বিরােধী দল সূত্রে প্রকাশ, বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালােচনাসহ কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা নাজিমুদ্দীনের মৃত্যুতে শােক প্রকাশ করা হয়। সভায় সাম্প্রতিক করাচী গােলযােগ সম্পর্কেও আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকাশ, আগামীকল্যের অধিবেশনে সম্মিলিত বিরােধী দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং কর্মসূচী প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে আলােচনা করা হইবে। উক্ত অধিবেশনে আসন্ন পরিষদ নির্বাচন সম্মিলিত বিরােধী দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রশ্নটিও বিবেচিত হইবে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের অনেকে মনে করিতেছেন যে, সম্মিলিত বিরােধী দলের উচিত আসন্ন পরিষদ নির্বাচন বয়কট করিয়া বর্তমান শাসনতন্ত্র পাল্টানাের উদ্দেশ্যে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়িয়া তােলা। তাহারা এই মর্মে মত প্রকাশ করেন যে, বর্তমান শাসনতন্ত্র ৮০ হাজার বুনিয়াদী গণতন্ত্রীদের হাতে সমস্ত ক্ষমতা সমর্পণ করিয়াছে। এই বুনিয়াদী গণতন্ত্রীগণ নির্বাচিত হইবার পর জনমতের প্রতি বিন্দুমাত্রও সম্মান প্রদর্শন করেন নাই। পক্ষান্তরে আরেকদল সদস্য মনে করেন যে, আসন্ন পরিষদ নির্বাচন বয়কট করিলে সম্মিলিত বিরােধী দলের আন্দোলনের স্বার্থহানি ঘটিবে। আইন পরিষদের “ভিতর ও বাহিরে” আন্দোলন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে পরিষদ নির্বাচনে সম্মিলিত বিরােধী দলের অংশগ্রহণ করা উচিত।
মালিক গােলাম জিলানী, সরদার শওকত হায়াত, জনাব মাহমুদুল হক ওসমানী, সৈয়দ আলতাফ হােসেন, হাজী মােহাম্মদ দানেশ, সৈয়দ মুসলেহউদ্দীন আহমেদ, চৌধুরী মােহাম্মদ আলী, শেখ নাসিম হাসান, মােহাম্মদ সাবির জাফরী, মওলানা আবদুল আলা মওদুদী, মিয়া মােহাম্মদ তােফায়েল, চৌধুরী গােলাম মােহাম্মদ, মওলানা মােহাম্মদ আবদুর রহিম, প্রফেসার গােলাম আজম, জনাব আবুল কাশেম খান, জনাব ইয়াহিয়া বখতিয়ার, জনাব খান, জহির উদ্দিন, জনাব জুলফিকার বােখারী (বিশেষ আমন্ত্রণক্রমে) শাহ আজিজুর রহমান, শেখ মুজিবর রহমান, মাহমুদ আলী কাসুরী, নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, মীর গােলাম রসুল তালপুর (বিশেষ আমন্ত্রণক্রমে), সৈয়দ মােহাম্মদ আফজাল, শেখ আবদুল মজিদ সিন্ধী প্রমুখ অদ্যকার অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকল্য মিস জিন্নার সহিত এক একতার পার্টিতে মিলিত হইবার পূর্বে সম্মেলনে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এবং কার্যসূচী প্রণয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে বলিয়া আশা করা যাইতেছে। সম্মেলনের সম্পাদক অদ্যকার বৈঠক সমাপ্ত হইবার পর ২টি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করিয়াছেন। উহার একটিতে খাজা নাজিমুদ্দিনের মৃত্যুতে শােক প্রস্তাব ও অপরটিতে সাম্প্রতিক করাচী গােলযােগের বিষয় উল্লেখ করা হয়। সম্মেলনে গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, “খাজা নাজিমুদ্দিনের মৃত্যু বিরােধী দল এবং বিরােধী দলের আদেশে নির্মম আঘাত হানিয়াছে। জাতি খাজা সাহেবের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকিবে।”
প্রস্তাবে খাজা নাজিমুদ্দিনকে “পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনায়ক হিসাবে চিহ্নিত করিয়া বলা হয় যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে একটি গণতান্ত্রিক সুত্রে আবদ্ধ করার জন্য যাহারা প্রাথমিক প্রচেষ্টা চালান তিনি তাহাদের অন্যতম।
করাচী গােলযােগ সম্পর্কিত অপর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই মর্মে দাবী জানান হইয়াছে যে, করাচীর ডি, আই, জি ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে বদলী করা হােক, বর্তমানে তদন্তকার্য্যে নিয়ােজিত তদন্ত কমিটি বাতিল করিয়া সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হােক।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে করাচী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের যােগ্য ক্ষতিপূরণদানের দাবী জানান হয়। উল্লেখ করা হয় যে, “সারাদেশে রাজনৈতিক দলসমূহ, সংবাদপত্র ও জনমত প্রকাশের অপরাপর সংস্থাগুলি করাচী গােলযােগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করিয়াছে”।
বিজ্ঞপ্তিতে অভিযােগ করা হয় যে, “স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ ও আইন মান্যকারী নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হইয়াছে” সরকার বিরােধী দলের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী পূরণ না করিলে সম্মিলিত বিরােধী দল পাকিস্তানের প্রখ্যাত ও স্বাধীন বিচারপতিদের উক্ত দায়িত্ব সম্পাদনের অনুরােধ জ্ঞাপন করিবে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব