দৈনিক ইত্তেফাক
৫ই জানুয়ারী ১৯৬৫
গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলিবেই
জনাব আইয়ুবের ‘তথাকথিত জয়’ সম্পর্কে শেখ মুজিবরের বিবৃতি
সম্মিলিত বিরােধী দলের নেতা শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (সােমবার) এক বিবৃতিতে বলেন যে, জনসাধারণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাংক্ষা বাস্তবায়নের সংগ্রাম অবিশ্রান্তভাবে চলিবে।
সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব জনসাধারণকে এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, “চূড়ান্ত বিজয় আমাদেরই হইবে। আইয়ুব খানের তথাকথিত বিজয়ে নিরাশ হওয়ার কিছুই নাই।”
জনসাধারণ ধৈৰ্য্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিবর্তন কালের ক্লেশ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মােকাবিলা করিবেন বলিয়া তিনি আস্থা প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে শেখ মুজিব বলেন, প্রধান নির্বাচনী কমিশনারের নিকট হইতে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ফলাফল শ্রবণ করিয়া সমগ্র জাতি কৌতুকবােধ করিয়াছে।
তিনি বলেন, চূড়ান্ত বিজয় আমাদের জন্যই অপেক্ষা করিতেছে; তাই হতাশ হওয়ার কিছুই নাই। তিনি বলেন, জনসাধারণ কখনও পরাজিত হইতে পারে না, ইতিহাসের শিক্ষা কখনও ভ্রান্ত হইতে পারে না। তাই আমার বিশ্বাস, জাতি ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিবর্তন কালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হইবেন।
শেখ মুজিব বলেন, সারাবিশ্বের নিকট ইহা সুবিদিত যে, গােটা জাতি মাদারে মিল্লাতের পশ্চাতে ঐক্যবন্ধ হইয়াছে এবং তিনি জনসাধারণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাংক্ষার প্রতীকরূপে প্রতিভাত হইয়াছেন। নির্বাচনী অভিযানের সময়েই ইহা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে দেখা গিয়াছে এবং পাকিস্তানের সর্বত্র লক্ষ লক্ষ মানুষ মাদারে মিল্লাতকে অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন জ্ঞাপন করিয়াছে।
তিনি বলেন, গােটা জাতি বিস্ময় ও বেদনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করিয়াছে। নিয়ন্ত্রিত ভােটাধিকারের মধ্যেও যেভাবে ভীতি প্রদর্শন, জবরদস্তি, প্রলােভন, নির্যাতন ও সন্ত্রাসের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করা হইয়াছে তাহা বিস্ময়কর। তথাকথিত নির্বাচনের স্বরূপ উদঘাটন করিয়া শেখ মুজিব বলেন, কপ নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি এবং ভুয়া মামলা রুজু করা হইয়াছে। তিনি বলেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতাসীন চক্রের সমর্থকরা নিরীহ জনসাধারণ ও বিরােধী দলীয় কর্মীদের উপর হামলা করিতেছে।
অতঃপর তিনি বলেন ঃ আমি ইহা পরিষ্কারভাবে জানাইয়া দিতে চাই যে, নির্যাতন দ্বারা গণ-আন্দোলন দমন করা যায় না। শেষ পর্যন্ত জনগণের জয় অনিবার্য। শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে। —পি,পি,এ
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব