দৈনিক ইত্তেফাক
৭ই জানুয়ারী ১৯৬৫
জাতির জন্য ভবিষ্যতের গর্ভে সঞ্চিত দুর্ভোগের সূচনামাত্র
করাচীর বর্বরতা ও দেশব্যাপী ধর-পাকড় সম্পর্কে শেখ মুজিব
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (বুধবার) সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে করাচীর নিরীহ মানুষের উপর সংঘটিত বর্বরতার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের গর্ভে জাতির জন্য আরও যে দুর্ভোগ জমা রহিয়াছে, ইহা তাহারই সূচনামাত্র।
আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী অবিলম্বে শান্তি ও নিয়মতান্ত্রিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। অন্যথায় ইহার প্রতিফল সরকারকেই ভােগ করিতে হইবে বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন। শেখ মুজিবর রহমান তাঁহার বিবৃতিতে বলেন : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘােষণার অব্যবহিত পরে কনভেনশন লীগের একশ্রেণীর সমর্থক ‘বিজয়ােল্লাসের নামে করাচীসহ দেশের বিভিন্ন অংশে বর্বরতার যে তাণ্ডব সৃষ্টি করিয়াছে তাহা অপ্রত্যাশিত না হইলেও অস্বাভাবিক ও দুঃখজনক। সমগ্র দেশে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কাজ পুরাদমে শুরু করা হইয়াছে।
করাচী পুলিস ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মােকাবিলার ব্যাপারে যে নির্বিকার-চিত্ততার পরিচয় দিয়াছে, শেখ মুজিব উহাকে হতাশাজনক বলিয়া অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সুসংগঠিত গুণ্ডাদলের হামলায় অন্যূন ৮ ব্যক্তি নিহত ও বহুলােক গুরুতররূপে আহত হইয়াছে। এছাড়া বহুলােকের ঘরবাড়ী ও দোকানপাট লুণ্ঠিত হইয়াছে। এই নিরীহ মানুষগুলির একমাত্র অপরাধ তাহারা মাদারে মিল্লাতকে ভােট দিয়াছিল।
শেখ মুজিব বলেন, বিরােধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতার খুবই নিন্দনীয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিনসহ প্রদেশের অসংখ্য কর্মী ও নেতার গ্রেফতার প্রতিহিংসাপরায়ণতারই নিদর্শন। বিরােধী দলকে পঙ্গু করাই ইহার উদ্দেশ্য।
শেখ মুজিব করাচীতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং তাহাদিগকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দানের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব