You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
৩০শে ডিসেম্বর ১৯৬৫

শেখ মুজিবরের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার সওয়াল-জবাব সমাপ্ত
৪ঠা জানুয়ারী রায় দানের তারিখ ধার্য

(কোর্ট রিপাের্টার)
গতকল্য (বুধবার) ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম, বি, আলমের কোর্টে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযােগে আনীত মামলার সওয়াল-জবাব সমাপ্ত হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আলীম সরকার পক্ষ হইতে সওয়াল-জবাব শুরু করেন। তিনি শেখ মুজিবরের সংশ্লিষ্ট বক্তৃতার আপত্তিকর বক্তৃতাটি আদালতে পেশ করেন। তিনি বলেন যে, শেখ মুজিবর রহমান এই বক্তৃতার মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আইনতঃ প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণের মনে বিদ্বেষের সৃষ্টি করিয়াছেন। পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আলীম প্রায় দেড়ঘণ্টাকাল সওয়াল-জবাব করেন। তিনি বলেন যে, সরকার বিরােধী এইসব উক্তি আইনতঃ দণ্ডনীয়।
১৯৬৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে জননেতা জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুতে আহূত শােক সভায় শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা আইনতঃ প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে উত্তেজিত ও তাহাদের মনে ঘৃণা ও দ্বেষ সৃষ্টি করিয়াছে অথবা করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে- এই মর্মে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অনুমােদনক্রমে ঢাকার তৎকালীন পুলিস সুপার জনাব মােহাম্মদ ইসা এক অভিযােগ আনয়ন করিলে এই মামলার সূত্রপাত হয়। আসামীর পক্ষের প্রধান আইনজীবী জনাব আবদুস সালাম খান তাঁহার সওয়াল-জবাব প্রসঙ্গে বলেন যে, মরহুম জননেতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী পাকিস্তান আন্দোলনের অগ্রদূত ছিলেন। তাঁহারই নেতৃত্বের দরুন একমাত্র বাংলাদেশেই পাকিস্তান ইস্যুর উপর মুসলিম লীগ বিপুল ভােটাধিক্যে জয়লাভ করিয়া সরকার প্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ হয়। অথচ, পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতীক মরহুম শহীদ সােহরাওয়ার্দীকেই বৃদ্ধ বয়সে বিনা বিচারে কারাভােগ করিতে হয়। ফলে, তাহার স্বাস্থ্যের দারুণ অবনতি ঘটে, স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য তিনি বিদেশ যান এবং সেখানে মারা যান। শেখ মুজিবর রহমান এই মহান নেতার ২০ বৎসর যাবৎ বিশ্বস্ত সহচর ও প্রিয়পাত্র ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি তাঁহার মৃত্যুতে শােকাভিভূত হইয়া পড়িয়াছিলেন। তাই শােকসভায় তিনি তাঁহার বক্তৃতায় যাহা কিছু বলিয়াছেন- উহা নেতার মৃত্যুতে শােকাভিভূত ভক্তের আবেগপূর্ণ আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। উহা শুনিয়া শ্রোতারা শােকাভিভূত হইয়াছে মাত্র, তাহাদের মনে অন্য কোন ভাব জাগে নাই। তাহাছাড়া সরকার পক্ষের সাক্ষীদের মতেই শেখ মুজিবর রহমান ঐদিন প্রায় অর্ধঘণ্টাকাল বক্তৃতা করিয়াছেন, কিন্তু কোর্টের সম্মুখে তাঁহার যে বক্তৃতা উপস্থিত করা হইয়াছে, উহা করিতে ২/৩ মিনিট সময়ের প্রয়ােজন মাত্র।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!