You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.12.12 | স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সরকারী কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করাই উদ্দেশ্য - শেখ মুজিব | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
১২ই ডিসেম্বর ১৯৬৪

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সরকারী কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করাই উদ্দেশ্য
– শেখ মুজিব

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি) গােপালগঞ্জ, ১০ই ডিসেম্বর- অদ্য স্থানীয় বাজারে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, সম্মিলিত বিরােধীদল নির্বাচনে জয়ী হইলে মৌলিক গণতন্ত্র বা ওয়ার্কস প্রােগ্রাম বাতিল করা হইবে না। কারণ মৌলিক গণতন্ত্র ইউনিয়ন বাের্ড নামে পূর্বেও এই দেশে ছিল। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়ােজনীয়তাও এই দেশে সমধিক। ইউনিয়ন কাউন্সিলে নমিনেশন দেওয়া কোন বিধান নাই। মৌলিক গণতন্ত্র শুধু বজায়ই থাকিবে না, সত্যিকারের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে সি,ও এবং অন্যান্য সরকারী কর্মচারীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত হইয়া দেশের মানুষের সত্যিকারের মঙ্গলের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা নিজেদের বিচার বুদ্ধিমতে মৌলিক গণতন্ত্রীরা বাস্তবায়িত করিতে পারেন তাহারই ব্যবস্থা করা হইবে। সম্মিলিত বিরােধীদল এমন অবস্থার সৃষ্টি করিবে যাহাতে অতঃপর ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যরা নিজের উন্নয়ন পরিকল্পনার বাজেট প্রণয়ন করিতে পারে। যারা আজ প্রচার করে যে, সম্মিলিত বিরােধী দল নির্বাচনে জয়ী হইলে মৌলিক গণতন্ত্র উঠাইয়া দেওয়া হইবে- তাহারা মিথ্যা বলে এবং ভােটারদের বিভ্রান্ত করাই তাহাদের একমাত্র লক্ষ্য।
করাচীতে ছাত্রদের উপর গুলীবর্ষণ,বাগেরহাটে গুলীবর্ষণ, বাতাকান্দিতে গুলীবর্ষণ, ছাত্র, কৃষক, শিক্ষক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের উপর সরকারী নির্যাতন নীতির তীব্র সমালােচনা করিয়া শেখ মুজিব বলেন যে, বর্তমান সরকার নাগরিক জীবনের প্রতি স্তরের মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার চালাইয়াছেন এবং এই শাসনামলে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী ছাড়া আর কেহই খুশী নয়।
নির্বাচনী কলেজের নির্বাচিত সদস্য ডাক্তার নিজামুল ইসলাম এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ভােটারদের নিরাপত্তাবিধানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্মীদের পরামর্শ দান প্রসঙ্গে শেখ মুজিব বলেন যে, আজ সরকারী দল নূতন নূতন সব যানবাহন ও টাকার থলি লইয়া ভােটার ক্রয় করিতে বাহির হইবে। এই পন্থায় কাবু করিতে না পারিলে তাহারা শাসন ও শােষণের ভয় দেখাইবে।
এইসব লােক যাহাতে তাহাদের অভীষ্টসিদ্ধি লাভ না করিতে পারে তজ্জন্য ইহাদের কবল হইতে ভােটারদের মুক্ত রাখিতে হইবে। এই ব্যক্তিরা যাহাতে গ্রামের ত্রিসীমানায় না ঘেষিতে পারে তজ্জন্য সর্বত্র গণতান্ত্রিক কর্মীদের আজ ‘প্রতিরক্ষা কমিটি’ (ডিফেন্স কমিটি) গঠন করিতে হইবে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব