You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.12.14 | নির্বাচকমণ্ডলীর চোখে-মুখেও আজ রােষবহ্নি- শেখ মুজিব | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
১৪ই ডিসেম্বর ১৯৬৪

নির্বাচকমণ্ডলীর চোখে-মুখেও আজ রােষবহ্নি-
-শেখ মুজিব

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি) লাকসাম, ১২ই ডিসেম্বর-“স্থায়ী গােলামির হাত হইতে নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য মাদারে মিল্লাতকে জয়যুক্ত করুন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রকৃত প্রস্তাবে গােলামির বিরুদ্ধে আজাদী, একনায়কদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র এবং একব্যক্তির শাসনের বিরুদ্ধে আইনের শাসনের সরাসরি সগ্রাম। আপনাদের একথা স্মরণ রাখা উচিত, এই নির্বাচনে পরাজিত হইলে দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইবে। আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের সগ্রাম; আমরা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেই সংগ্রাম চালাইয়া আসিতেছি।”
অদ্য স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরী ময়দানে নির্বাচনী কলেজের সদস্যসহ এক বিরাট জনসমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত মন্তব্য করেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, লাকসামের নির্বাচনী কলেজের ২৪৯ জন সদস্যের মধ্যে ২১৭ জন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ মুজিব আরও বলেনঃ “নির্বাচনী কলেজের সদস্যরা দেশেরই সন্তান; তাই তাহাদের চোখেমুখেও আজ রােষবহ্নি ছাপ সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। নিজেদের রুটি-রুজির বিনিময়ে তাহারা জনসাধারণের স্বাধীনতা বিকাইয়া দিবেন না বলিয়া আমরা নিশ্চয়ই আশা করিতে পারি।”
এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি মৌলিক গণতন্ত্র সংস্থার ক্ষেত্রে সম্মিলিত বিরােধী দলের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন। নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের আশ্বাস দিয়া তিনি বলেন যে, সদস্যরা যেমন আছেন, তেমনই থাকিবেন। আগামী ৫ বৎসরের মধ্যে ইউনিয়ন কাউন্সিলের কোন নয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে না।
তিনি আরও বলেন যে, ইউনিয়ন কাউন্সিলের কাজ-কর্মের পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হইবে এবং উহাকে সর্বপ্রকার সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হইতে মুক্ত করা হইবে। স্বাধীন দেশে প্রতি হাজারে মাত্র একজনের হাতে ভােটাধিকার থাকা যে ন্যায্য নয়- এ কথা উপলব্ধিকরার জন্য তিনি নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তাহাদের বলেন যে, যে মুহূর্তে সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হইবে, সেই মুহূর্তে তাঁহারা ভােটাধিকার হারাইবেন। কাজেই এই ব্যবস্থা কখনও বাঞ্ছিত হইতে পারে না।
তিনি বলেন যে, গণতন্ত্রের উপরই পাকিস্তানবাদ প্রতিষ্ঠিত। এমতাবস্থায় জনসাধারণকে অবশ্যই ভােটাধিকার দিতে হইবে। বহিঃজগতে পাকিস্তানের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য স্থায়ীভাবে কনভেনশন লীগকে উৎখাত করা উচিত বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের জন্য সভাস্থলে একটি বিশেষ গ্যালারির ব্যবস্থা করা হয়। তাঁহারা সভাস্থলে পৌছিলে স্থানীয় ‘কপ’ নেতৃবৃন্দ তাহাদের মাল্যভূষিত করেন। অতঃপর শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে তাঁহাদের পরিচয় করাইয়া দেওয়া হয়। তাঁহারা যখন সকলে হাত তুলিয়া মাদারে মিল্লাতের প্রতি সমর্থন জানান, তখন জনসাধারণের দৃষ্টি তাঁহাদের উপর নিবদ্ধ থাকে। হাজার হাজার লােকের সম্মুখে তাঁহারা যখন “আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়া মাদারে মিল্লাতকে ভােট দানের ওয়াদা করেন, তখন এক অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি হয়। জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব লুত্যর রহমান খান বক্তৃতা প্রসঙ্গে আইয়ুব-সরকার কিভাবে জনসাধারণের আস্থা হারাইয়াছে, উহার কাহিনী বর্ণনা করেন।
জাতীয় পরিষদ সদস্য সৈয়দ হাবিবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ন্যাপনেতা দেওয়ান মাহবুব আলী, জনাব মুজিবর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব মাহবুবুল হক, এডভােকেট আবদুর রব প্রমুখও বক্তৃতা করেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, জনসভা উপলক্ষে এডভােকেট রব ঢাকা হইতে লাকসামে আগমন করেন। মাদারে মিল্লাতের পক্ষে প্রচার কার্যের জন্য তিনি লাকসামে অবস্থান করিবেন।
সােহরাওয়ার্দীর উপর আলােকচিত্র প্রদর্শনী
শেখ মুজিবর রহমান পরে এখানে জনাব শহীদ সােহরাওয়ার্দীর কর্মময় জীবনের উপর গৃহীত একটি আলােকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি অসুস্থ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আবদুল আউয়ালের বাড়ীতে যান এবং তাহার অবস্থা দেখেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব