You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
১লা ডিসেম্বর ১৯৬৪

আইয়ুবের নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারী অর্থ ব্যয়
বিরােধীদলের ষ্টিয়ারিং কমিটির সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য সােমবার সম্মিলিত বিরােধী দলের কেন্দ্রীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির দুই দিনব্যাপী সভার সমাপ্তি অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের নির্বাচনী অভিযান বাবদ সরকারী তহবিল বিশেষ করিয়া উন্নয়ন ও পরিবার পরিকল্পনা খাতের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হইতেছে বলিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বৈদেশিক সাহায্য ও সরকারী তহবিল হইতে বিপুল পরিমাণ অর্থের এইরূপ খেয়াল-খুশীপূর্ণ অপচয়ের তীব্র প্রতিবাদ করিয়া জনসাধারণের নিকট যাবতীয় হিসাব-নিকাশ প্রদানের দাবীতে সভায় এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রস্তাবে সরকারী কর্মচারীদের হুশিয়ারী প্রদান করিয়া বলা হয় যে, তাহারা জনসাধারণের খাদেম। অতএব, ক্ষমতাসীন সরকারী দলের দ্বারা চালিত না হইয়া অথবা উক্ত দলের কাজকর্মে নিযুক্ত না হইয়া তাহাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকিতে হইবে। মরহুম খওয়াজা নাজিমুদ্দীনের নিউ ইস্কাটন রােডস্থ বাসভবনে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত বিরােধী দলের কেন্দ্রীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির দুই দিনব্যাপী সভার এই সমাপ্তি অধিবেশনে সম্মিলিত বিরােধী দলে পূৰ্ব্ব পাকিস্তান কমিটির সদস্যগণও উপস্থিত থাকেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে মওলানা আবুল আলা মওদুদী, চৌধুরী মােহাম্মদ আলী, সৈয়দ মােহাম্মদ আফজাল, শেখ মুজিবর রহমান ও জনাব মাহমুদুল হক ওসমানীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এই যুক্ত অধিবেশনে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনের ফলাফল পৰ্যালােচনা শেষে উক্ত নির্বাচনে সম্মিলিত বিরােধী দলের ব্যাপক সাফল্যে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট পদের আসন্ন নির্বাচনে সর্বপ্রকার ভয়ভীতি ও প্রলােভন উপেক্ষা করিয়া জনসাধারণের ইচ্ছানুযায়ী মাদারে মিল্লাতকে জয়যুক্ত করার জন্য নবনির্বাচিত মৌলিক গণতন্ত্রীদের অনুরােধ জানান হয়। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, প্রেসিডেন্ট পদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বানচাল করিয়া দেশময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে গণতন্ত্র কামী জনসাধারণ ও সম্মিলিত বিরােধী দলীয় সমর্থকদের উপর সরকারী দল কর্তৃক অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালাইয়া যাওয়ার উদ্বেগজনক খবর অহরহ কেন্দ্রীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির নিকট আসিয়া পৌছিতেছে। এইরূপ অবস্থা চলিতে থাকিলে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভােটাধিকার প্রয়ােগ একেবারে অসম্ভব ব্যাপার না হইলেও রীতিমত দুঃসাধ্য ব্যাপার হইবে বলিয়া সভায় উল্লেখ করা হয়।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত এক প্রস্তাবে সরকারী দলকে যাবতীয় দমন ও নির্যাতনমূলক কার্যকলাপ হইতে বিরত থাকিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান হয়। অন্যথায় কোন প্রকার অশান্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হইলে সরকারী দলকেই দায়ী হইতে হইবে বলিয়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। সভায় স্বদেশপ্রেমিক জনসাধারণকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ এবং নবনির্বাচিত মৌলিক গণতন্ত্রীদের সৰ্ব্বপ্রকার অকল্যাণকর শক্তির হাত হইতে নিরাপদ দূরত্বে সরাইয়া রাখার জন্য সক্রিয় হওয়ার অনুরােধ জানান হয়।
সম্মিলিত বিরােধী দলের ষ্টিয়ারিং কমিটির সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, মিস জিন্নাহ নির্বাচনে জয়লাভ করিলে মৌলিক গণতন্ত্রকে উৎখাত করা হইবে বলিয়া সরকারী লীগ যে প্রচারকার্য চালাইতেছে, তাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বস্তুতঃ সম্মিলিত বিরােধী দল মৌলিক গণতন্ত্রকে শুধু বজায় রাখিতেই নয় আরও শক্তিশালী করিয়া গড়িয়া তুলিতে বদ্ধপরিকর। প্রস্তাবে মিথ্যা প্রচার কাৰ্য্যে বিভ্রান্ত না হইবার আবেদন জানান হয়।
অন্য একটি প্রস্তাবে সম্মিলিত বিরােধীদলের ষ্টিয়ারিং কমিটি ঘােষণা করেন যে, বিরােধীদলের মধ্যে সবগুলি দলই একতাবদ্ধভাবে নয় দফা কাৰ্যসূচীকে বাস্তবায়িত করিবার পথে অগ্রসর হইবে। নির্বাচনে জয়লাভের পর দলসমূহের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হইবে বলিয়া সরকারী লীগ যে প্রচার করিতেছে, তাহা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!