You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
৫ই ডিসেম্বর ১৯৬৪

মুজিবের জওয়াবে ভুট্টো বেসামাল

হায়দরাবাদ, ৪ঠা ডিসেম্বর।-পাকিস্তানের পররাষ্ট্র উজির জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো আজ সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক একটি বিবৃতির প্রতিবাদ করিয়াছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, শেখ মুজিবর রহমান ছাহেব পুনরায় পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে খুব সহজ ও হাস্যকর যুক্তির অবতারণা করিয়াছেন- যাহার প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী ও রীতিমত বিপজ্জনক হইতে পারে।
শেখ মুজিবর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক জ্ঞানের প্রতি কটাক্ষ করিয়া জনাব ভূট্টো বলেন, জনাব শেখ মুজিবর রহমান তাহার তেজস্বিতার জন্য প্রশংসা পাইয়া থাকেন। তাহার তেজস্বিতা ও যুবসুলভ কর্মদক্ষতার প্রাদেশিক রাজনীতির অঙ্গনে একটা মূল্য থাকিতে পারে। মাঝে মাঝে তিনি জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও নিজেকে তুলিয়া ধরেন। কিন্তু পররাষ্ট্র নীতির সম্পূর্ণ অপরিচিত এলাকায় যখন তিনি প্রবেশ করেন এবং তদ্বিষয়ে কিছু বলেন, তখন এই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সহিত গভীর সম্পর্কযুক্ত বিষয়টি সম্পর্কে তাহার জ্ঞানের দারিদ্র্য দুঃখজনক। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা বা তাহাদের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করা এক কথা। কিন্তু বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে একই পন্থা অনুসরণ করা ভ্রমাত্মক। বিদেশের সহিত সম্পর্ক নির্ণয়ের ব্যাপারটিকে যদি মিউনিসিপ্যালিটির সমস্যার নিরিখে বিচার করা হয়, তাহা হইলে উহার ফলে যে ক্ষতি হইবে, উহা অপূরণীয় এবং এই ক্ষতি স্থায়ী হইবে। পররাষ্ট্র নীতি ব্যাপারটি খুবই দূরূহ ও জটিল। মােচী গেট কিংবা পল্টন ময়দানে লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিলেই ইহার দায় সারা যায় না। ইহা অতীব দুঃখজনক যে, জনাব মুজিবর রহমান এইরূপ একটি স্পর্শ-সরল বিষয়ের বিকৃত রূপ দিয়াছেন। জনাব ভূট্টো বলেন, পাকিস্তান একঘরে হইয়া গিয়াছে বলিয়া জনাব রহমান অভিযােগ করিয়াছেন। ইহা বর্তমানের বাস্তব অবস্থার সম্পূর্ণ বিকৃতি ছাড়া কিছু নহে। বরং এক্ষণে সৰ্ব্বপ্রকার ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরােধী সংগ্রামে পাকিস্তান আফ্রো-এশীয় দেশগুলির অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে বলিয়া আমি দাবী করিব। পূর্ববর্তী শাসক মহলই পাকিস্তানকে বিশ্ব দরবারে একঘরে করিয়া ফেলিয়াছিল। বর্তমান শাসন আমলেই পাকিস্তান একঘরে অবস্থা হইতে মুক্ত হইয়াছে। দেশের পররাষ্ট্র নীতি যে আত্মসম্মানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা যায়, এই বােধ, দূরদর্শিতা কিংবা সাহস কোনটাই পূৰ্ব্ব শাসকদের ছিল না। এই সরকারের আমলেই কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তান এক বিপুল সংখ্যক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রপুঞ্জের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হইয়াছে-যাহারা ইতিপূর্বে পাকিস্তানকে সমর্থনের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। অপরপক্ষে ভারতই আজ উহার অস্পষ্ট ও ভুল নীতির জন্য বিশ্বদরবারে একঘরে হইয়া পড়িয়াছে।
তিনি বলেন, ইতিপূৰ্ব্বে ১৪ই অক্টোবরে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ভারতে পাশ্চাত্য সামরিক সাহায্যের পটভূমি ও কার্যকারণ ব্যাখ্যা করিয়াছিলাম। ভারত আজ যে পথ অনুসরণ করিয়াছে উহাতে পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের নীতি অবশ্যই ব্যর্থ হইবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারই বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকার গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলদ্ধি করে। তাহার পর হইতে ফ্রান্স এবং বৃটেনও কাশ্মীর প্রশ্নে জোরের সহিত পাকিস্তানের সমর্থনে দাঁড়াইয়াছে। বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থের পরিপূরক পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করিতেছে। জনাব রহমান সরকারের সমালােচনা করিতে চাহেন। কিন্তু যে বিষয়টির সহিত তিনি ভালােভাবে পরিচিত নহেন তদ্বিষয়ে কিছু বলিতে যাওয়া তাঁহার অনুচিত। একথা আমার বলা উচিত নয়, কিন্তু তিনি বােধ হয় সােভিয়েট ইউনিয়নে সাম্প্রতিক পরিবর্তন সম্পর্কে খবর রাখেন না। আমি দেশবাসীকে এই আশ্বাস দিতে চাই, পাকিস্তান তাহার বর্তমান পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করিবে। পাকিস্তান শুধু পাশ্চাত্য জোটেই বন্ধু বাড়াইবে না এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, নিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সহিতও বন্ধুত্ব স্থাপন করিবে। -এ,পি,পি

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!