You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.12.07 | ছাত্র ও যুব সমাজকে সােহরাওয়ার্দীর অসমাপ্ত কার্য সম্পাদনের শপথ | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৭ই ডিসেম্বর ১৯৬৪

ছাত্র ও যুব সমাজকে সােহরাওয়ার্দীর অসমাপ্ত কার্য সম্পাদনের শপথ
গ্রহণ করিতে হইবে
ছাত্র লীগের আলােচনা সভায় বিচারপতি
জনাব ইব্রাহিমের আহ্বান মরহুম দুর্বার গণআন্দোলনের জনক
-শাহ আজিজ

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
“সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে ছাত্র ও যুব সমাজকে মরহুমের অসমাপ্ত কার্য তথা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়িত করার জন্য দৃঢ় শপথ গ্রহণ করিতে হইবে।” গতকল্য (রবিবার) সন্ধ্যায় ঢাকা বার লাইব্রেরী হলে ঢাকা শহর ছাত্র লীগের উদ্যোগে সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়ােজিত আলােচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণদান প্রসঙ্গে বিচারপতি জনাব মােহাম্মদ ইব্রাহিম উপরােক্ত মন্তব্য করেন।
আলােচনা সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শাহ আজিজুর রহমান বলেনঃ মুসলিম বাংলার রেনেসাঁ এবং পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলন বাস্তবায়নে এবং পাকিস্তান-পরবর্তী পর্যায়ে দেশে গণতান্ত্রিক বিরােধী দল প্রতিষ্ঠায় মরহুম শহীদ সােহরাওয়ার্দী সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখিয়া গিয়াছেন এবং বর্তমানে দেশে অধিকার আদায় আন্দোলনের যে দুর্বার গতি পরিলক্ষিত হইতেছে, তাহারও জনক হইতেছেন। মরহুম শহীদ সােহরাওয়ার্দী তিনিই প্রথম ঐক্যের উদাত্ত আহ্বান জানান ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন।”
আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান বলেনঃ “মরহুম সােহরাওয়ার্দী ছাত্র-যুবক সমাজকে সর্বাধিক ভালবাসতেন। তাই তাঁহার অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের জন্য ছাত্র ও যুব সমাজকে নেতৃত্ব দান করিতে হইবে।
গণতন্ত্রের মানসপুত্র জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে গতকল্য (রবিবার) সন্ধ্যায় ঢাকা বার লাইব্রেরী হলে ঢাকা শহর ছাত্র লীগের উদ্যোগে এই আলােচনা সভার আয়ােজন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ‘ইত্তেফাক’ সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হােসেন। সভার এক পর্যায়ে জনাব তফাজ্জল হােসেন জরুরী কার্যব্যাপদেশে অন্যত্র গমন করিলে জাতীয় পরিষদ সদস্য বেগম রােকাইয়া আনােয়ার সভানেত্রীত্ব করেন। আলােচনা সভায় প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন বিচারপতি জনাব মােহাম্মদ ইব্রাহিম।
সােহরাওয়ার্দীর জীবনের বিভিন্ন দিক আলােচনা করিয়া ভাষণ দেন জনাব ইব্রাহিম, জনাব তফাজ্জল হােসেন, শেখ মুজিবর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান, মরহুম সােহরাওয়ার্দীর নাতনী মিস শাহেদা সােলায়মান (মুন্নী); জনাব আবদুল বাকী বালুচ, শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, জনাব আবদুল মােমিন তালুকদার, পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রলীগ নেতা জনাব ইউসুফ হারুন এবং বেগম রােকাইয়া আনােয়ার। সােহরাওয়ার্দী স্মরণে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র এস,এম, মােমেন। আলােচনা সভা শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা শহর ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রশিদ খান (মুরাদ)।
শেখ মুজিবর রহমান
আলােচনা সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান মরহুম সােহরাওয়ার্দীর জীবনের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য দিকের প্রতি আলােকপাত করেন। তিনি বলেন যে, যে দেশের রাজনীতির প্রধান মূলধনই ধোকা বা ষড়যন্ত্র, সে দেশে রাজনীতি করিলেও মরহুম সােহরাওয়ার্দী কখনও ধোঁকা বা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই। তিনি বলেন যে, মরহুম সােহরাওয়ার্দী কখনও মিথ্যা কথা। বলিতেন না। শেখ মুজিব মরহুমের দানশীলতার বিবরণ দেন।
বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, মরহুম সােহরাওয়ার্দী নীতিনিষ্ঠ ছিলেন এবং এজন্যই তিনি অনাগত যুগেও বাঁচিয়া থাকিবেন। তিনি বলেন যে, মরহুম সােহরাওয়ার্দী ছাত্র ও যুব সমাজকে সর্বাধিক ভালবাসিতেন। তাই মরহুমের অসমাপ্ত কাজ সমাপন করার জন্যও ছাত্র ও যুব সমাজকে নেতৃত্ব দান করিতে হইবে।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, মরহুমের আত্মা তখনই প্রকৃত শান্তিলাভ করিবে, যখন দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইবে ও যখন দেশে কোন রাজবন্দী থাকিবে না। তিনি মরহুমের আদর্শ রূপায়ণের জন্য ছাত্র তথা যুব সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব