You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
২৬শে নভেম্বর ১৯৬৪

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পােলিং বুথ এর
অভ্যন্তরে প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিত থাকার অনুমতি দাবী
করাচীর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবের বক্তৃতা

করাচী, ২৫শে নবেম্বর- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান অদ্য এই মর্মে ইঙ্গিত দেন যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পােলিং এজেন্টদের যদি ভােট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে (পােলিং বুথ) উপস্থিত থাকার অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহা হইলে সম্মিলিত বিরােধী দল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত করিতে পারে। অদ্য অপরাহ্নে ফ্ল্যাগ ষ্টাফ হাউসে করাচীর নাগরিকগণ কর্তৃক তাহার সম্মানার্থ আয়ােজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি উপরােক্ত মন্তব্য করেন।
শেখ মুজিব বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পােলিং এজেন্টদের ভােট গ্রহণ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে উপস্থিত থাকিতে দেওয়া হইবে না বলিয়া শুনিতে পাওয়া গিয়াছে। তিনি এখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিধি পড়িয়া দেখেন নাই বলিয়া উল্লেখ করিয়া বলেন যে, পােলিং এজেন্টদের যদি উপস্থিত থাকিতে অনুমতি না দেওয়ারই বিধান করা হইয়া থাকে, তাহা হইলে নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হইবে এবং সে রকম অবস্থায় আমরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিব কিনা, তাহা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করিয়া দেখিতে হইবে।
তিনি এই মর্মে দাবী জানান যে, ভােটদাতারা ভােটের বাক্সে ভােটপত্র ফেলেন কিনা, তাহা দেখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পােলিং এজেন্টদের অবশ্যই সুযােগ দিতে হইবে। অথবা ভােটের বাক্স যাহাতে প্রিজাইডিং অফিসার এবং পােলিং এজেন্টদের দৃশ্যগােচর থাকে, তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
আওয়ামী লীগ নেতা ঘােষণা করেন যে, এই ব্যবস্থা না করা হইলে সরকারী কর্মপন্থার জন্য অত্যন্ত গুরুতর জটিলতা দেখা দিবে এবং সেজন্য আমরা দায়ী থাকিব না।
“দেশে নির্বাচনী কলেজের নির্বাচনে সম্মিলিত বিরােধী দল বিপুল ভােটাধিক্যে জয়লাভ করিয়াছে। এই বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কনভেনশন লীগ দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জনাব আইয়ুব খানকে আজ চরম পরাজয়ের জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে। সীমিত ভােটাধিকারের ভিত্তিতে আজ দেশবাসী স্পষ্টভাবে রায় দিয়াছে যে, এই দেশ গণতন্ত্র এবং পূর্ণ গণতন্ত্র চায়। দেশবাসী একনায়কতন্ত্রের ধারক-বাহক সকল কনভেনশন লীগারদের দেশের রাজনৈতিক জীবন হইতে চিরদিনের জন্য উৎখাত করিতে বদ্ধপরিকর। আজ দেশের আপামর জনসাধারণ সংগ্রামমুখর হইয়া উঠিয়াছে। জাতির ঐক্যবদ্ধ সগ্রামকে ব্যর্থ করিয়া দিতে পারে এমন কোন শক্তি বিশ্বে নাই।”
গতকল্য (বুধবার) করাচীস্থ মাদারে মিল্লাতের বাসভবন ফ্ল্যাগ ষ্টাফ হাউসে করাচীর নব-নির্বাচিত নির্বাচনী কলেজ সদস্যদের উদ্যোগে আয়ােজিত এক সম্বর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত ঘােষণা করেন।
মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে শেখ মুজিব ঘােষণা করেন যে, মৌলিক গণতন্ত্র প্রথার উচ্ছেদ সাধনের কোন প্রয়ােজন নাই। কারণ, এই ব্যবস্থা কোন নূতন ব্যবস্থা নয়। পূর্ব পাকিস্তানে ইউনিয়ন বাের্ড বহু পূর্ব হইতেই ছিল এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনাদির বাস্তবায়নের দায়িত্বও এই বাের্ডের উপরই ন্যস্ত থাকিত। সেইদিনের ইউনিয়ন বাের্ডের সম্মান ছিল। সরকারী আমলাতন্ত্র উহাতে দাঁত ফুটাইতে পারিত না। কিন্তু আজ যে ইউনিয়ন কাউন্সিল করা হইয়াছে তাহাতে আমলাতন্ত্রের ক্ষমতাই সব চাইতে বেশী এবং জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোন বিষয়ে নিজেদের মতানুযায়ী কাজ করার কোন ক্ষমতা নাই। তিনি বলেনঃ আমরা চাই যে, ইউনিয়ন কাউন্সিলগুলি সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমলাতন্ত্রের নাগপাশ হইতে মুক্তিলাভ করুক এবং জনসাধারণের সত্যকারের মঙ্গলসাধনে ব্রতী হােক।
শেখ মুজিব নবনির্বাচিত সদস্যদের অভিনন্দন জানাইয়া বলেন যে, আপনাদের স্কন্ধে দেশবাসী আজ এক গুরুদায়িত্ব অর্পণ করিয়াছে। আপনাদের বিচারবুদ্ধির প্রতি জাতির আস্থা আছে। আপনাদের সিদ্ধান্তের ফলে জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হইবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, আপনারা এমন কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন না- যাহার ফলে ভাবী নাগরিকেরা দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ হইয়া পড়ে।
কনভেনশন লীগের নির্বাচনী ভূমিকার সমালােচনা করিয়া শেখ মুজিব বলেন যে, এই পর্যন্ত কনভেনশন লীগ যেভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাইয়াছে তাহাতে এই সত্যই প্রমাণিত হইয়াছে যে, কনভেনশন লীগ ব্যক্তি-পূজকের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রমাণিত হইয়াছে যে, কনভেনশন লীগের ভিতরে ও বাহিরে এক ব্যক্তি ছাড়া দ্বিতীয় কোন শক্তি নাই। দেশবাসী একব্যক্তির পূজা করিতে রাজী নয়। এই রাষ্ট্র সর্বসাধারণের রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বসাধারণ শরীক হইতে চায়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!