You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
২৯শে নভেম্বর ১৯৬৪

‘দুর্বার গণ-জাগরণের মুখে শেষ পন্থাও বানচাল হইয়াছে
-শেখ মুজিব

(স্টাফ রিপাের্টার)
“গণ-জাগরণের মুখে কনভেনশন লীগ দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জনাব আইয়ুব খান তাঁহার সদর দফতর রাওয়ালপিণ্ডি শহরবাসীর ভােটও পাইবেন না। পূর্ব পাকিস্তানের মত পশ্চিম পাকিস্তানেও আজ ঘরে ঘরে মুক্তি-পাগল মানুষ মুক্তির সংগ্রামে আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তানের যে গণ-জাগরণ দেখা দিয়াছে সেই জাগরণের সামনে কোন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রই টিকিতে পারে না। পূর্ব পাকিস্তানীদের মত পাঠানবেলুচ, সিন্ধী-পাঞ্জাবী সবাই আজ মুক্তির নেশায় পাগল। সবার মুখেই আজ এক কথা হয় মুক্তি, নয় মৃত্যু। সাতদিনব্যাপী পশ্চিম পাকিস্তান সফর শেষে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও সম্মিলিত বিরােধী দলের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবর রহমান। গতকল্য (শনিবার) ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিয়া বিমান বন্দরে সমবেত নবনির্বাচিত নির্বাচনী কলেজ সদস্য ও কর্মীদের উপরােক্ত ভাষায় তাঁহার পশ্চিম পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
শেখ মুজিব বলেন, চাটুকারদের চাটুকারিতায় যাহারা এতদিন অন্ধ হইয়া ছিলেন, গণ-আন্দোলনের দুর্বার কষাঘাতে আজ তাঁহাদের চক্ষু উন্মিলিত হইয়াছে। সদ্য উন্মিলিত চক্ষুর প্রথম দৃষ্টিতেই ইহারা যে গণ-জাগরণ দেখিয়াছেন, তাহাতে তাহারা আজ দিশাহারা বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন। চরম বিভ্রান্তি আর বিপর্যয়ের তীরে দাঁড়াইয়া আজ হঁহারা একের পর এক চালে ভুল করিয়া চলিয়াছেন। শেখ মুজিব বলেন যে, যে তিনজন মন্ত্রী প্রেসিডেন্টের ডামি হিসাবে নির্বাচনে প্রার্থী হইয়াছিলেন, তাহারা স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া নাম প্রত্যাহার করেন নাই। দেশবাসী তাহাদের ঘৃণ্য কারসাজি ধরিয়া ফেলে এবং মাদারে মিল্লাতকে স্ক্রীনড আউট করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে। জাগ্রত জনতার বিপুল বিক্ষোভ তাঁহাদের সকল কারসাজিকে ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। তাহারা মনােনয়ন প্রত্যাহার করিয়াছেন। এই মনােনয়ন প্রত্যাহারের মধ্য দিয়া দেশবাসীরই জয় সূচিত হইয়াছে। তাই দেশবাসীই এই বিজয়ের অধিকারী।
গতকল্য শেখ মুজিবরের সহিত একই বিমানে নেজামে ইসলাম প্রধান চৌধুরী মােহম্মদ আলীও লাহাের হইতে ঢাকা আগমন করেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলােচনাকালে বলেন যে, জনমতের সামনে সরকার পরাজয় বরণ করিয়াছে এবং সেইজন্যই মন্ত্রীরা মনােনয়ন প্রত্যাহার করিয়াছেন। জনাব চৌধুরী অদ্য (রবিবার) নিখিল পাকিস্তান সম্মিলিত বিরােধীদলের ষ্ট্রিয়ারিং কমিটির বৈঠকে যােগদান করিবেন।
চৌধুরী মােহাম্মদ আলী ও শেখ মুজিবর রহমানকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য সম্মিলিত বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!