You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.12.01 | জনাব হাবিবুল্লা বলেন, আইয়ুবের প্রতি ঈর্ষা ছাড়া বিরােধী দলের মধ্যে আর কোন মিল নাই | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১লা ডিসেম্বর ১৯৬৪

জনাব হাবিবুল্লা বলেন
আইয়ুবের প্রতি ঈর্ষা ছাড়া বিরােধী দলের মধ্যে আর কোন মিল নাই

পেশােয়ার, ২৯ শে নবেম্বর। – কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র উজির খান হাবিবুল্লা খান অদ্য এখানে বলেন যে, সম্মিলিত বিরােধী দলের ৫টি অঙ্গ দলের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও তাহার শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ঈর্ষা, ঘৃণা ও ক্রোধ ছাড়া আর অন্য কোন প্রকার মিলই নাই।
আজ সকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহিত আলােচনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট উজির উপরােক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারী করা হইলে মিস ফাতেমা জিন্নাহও উহার প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। এবং দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিশ্বাস, নিরাপত্তা বােধ এবং স্থিতিশীলতা ফিরাইয়া আনা ও প্রশাসনিক ও সমাজ বিরােধী কার্যকলাপের মূলােৎপাটনের জন্য খােদা যাহাতে সেনাবাহিনীকে শক্তি দেন তজ্জন্য তিনি আশা প্রকাশ করিয়াছিলেন। এক প্রশ্নের জওয়াবে তিনি বলেন যে, বিরােধীদল এমন এক অবস্থা সৃষ্টির প্রয়াস পাইতেছিল যার জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিলম্বিত হইতে পারিত। বিরােধী দলের এইরূপ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই ৩ জন কেন্দ্রীয় উজিরকে মনােনয়নপত্র দাখেল করিতে হইয়াছিল বলিয়া তিনি জানান।
তিনি বলেন যে, পাকিস্তান মােছলেম লীগ (কনভেনশন) বিরােধী দলের প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহকে স্ক্রীন্ড আউট করার কোন অভিলাষ ছিল বলিয়া মনে করিলে ভুল হইবে। তিনি বলেন, বিরােধী দলের এই সম্পর্কিত সংশয় শুধু ভ্রান্তিমূলক ও ভিত্তিহীন তাহা ৩ জন কেন্দ্রীয় উজিরের মনােনয়নপত্র প্রত্যাহারের মধ্যেই প্রকাশ পাইয়াছে। তিনি বলেন যে, তাহারা সব সময়ই মিস ফাতেমা জিন্নাহ ও প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের মধ্যে সরাসরি ও পক্ষপাতহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাহাদের মনােভাব ব্যক্ত করিয়া আসিতেছেন। তিনি বলেন যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ নির্বাচনী কমিশনই ধার্য্য করিবেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে যত শীঘ্রই সম্ভব অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। তিনি বলেন যে, জনসাধারণ পাকিস্তান মােছলেম লীগ (কনভেনশন) ও সম্মিলিত বিরােধী দলের নীতি ও কর্মসূচী সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকেফহাল। এমতাবস্থায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কোন যুক্তি নাই বলিয়া তিনি জানান। তিনি বলেন যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও মিস জিন্নাহ উভয়েই প্রদেশের উভয় অংশ সফর করেন এবং দেশবাসীর সম্মুখে তাহাদের কর্মসূচী ও দলীয় নীতি ব্যাখ্যা করেন। দেশবাসী ও প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও মিস জিন্নাহর দোষগুণ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকেবহাল। এক প্রশ্নের জওয়াবে তিনি বলেন, যে সম্মিলিত বিরােধী দলের কর্মসূচী এত অধিক দ্বন্দ্বপূর্ণ যে, ইহার পাঁচটি অঙ্গ দলের মধ্যে কোনই মিল খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। শেখ মুজিব সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র উজির বলেন যে, শেখ মুজিব পূৰ্ব্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে চায়। এবং ইহা করা হইলে পাকিস্তানেরই ধ্বংস সাধন করা হইবে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে সম্মিলিত বিরােধী দলের এই অঙ্গদলসমূহ সকলেই ভিন্ন মত পােষণ করে। বিরােধীদল ক্ষমতাসীন হইলে দেশের অবস্থা কিরূপ হইবে তাহা ধারণা করা কষ্টসাধ্য নহে বলিয়া তিনি জানান। তিনি বলেন যে, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিনেই বিরােধী দলের অঙ্গদলগুলি সম্পূর্ণরূপে দ্বিধাবিভক্ত হইয়া যাইবে এবং এইরূপ ভিন্ন আদর্শাবলম্বী হওয়ার ফলেই দেশে শুধু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বিশৃংখলা বিরাজ করিবে। -এ,পি-পি।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব