You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২০শে নভেম্বর ১৯৬৪

শােয়েবের জবাবে শেখ মুজিব
আইয়ুব ও তাহার সরকারকেই ভারতীয় চর আখ্যা দেওয়া যাইতে পারে

ঢাকা, ১৯শে নভেম্বর।-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য সংবাদপত্রে যে বিবৃতি প্রদান করেন তাহা নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ
কোন একটি ভারতীয় পত্রিকায় আমার বিবৃতি প্রকাশিত হইয়াছে বলিয়া কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জনাব মােহাম্মদ শােয়েবের মন্তব্যের উপর অন্য এক শ্রেণীর সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদের উপর আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। এখানে যে কয়টি ভারতীয় সংবাদপত্র পাওয়া যায় তাহাতে প্রকাশিত অনুরূপ কোন বিবৃতির উপর আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয় নাই। সুতরাং ভারতীয় পত্রিকায় কি প্রকাশিত হইয়াছে না হইয়াছে তাহা পরীক্ষা করিতে আমি অসমর্থ।
বিগত কিছুদিন আগে এ্যাসােশিয়েটেড প্রেস অব আমেরিকার প্রতিনিধি সহ বিদেশী সংবাদপত্রের কতিপয় প্রতিনিধি বর্তমান নির্বাচনী অভিযানের বিষয়ে আলাপ-আলােচনার জন্য আমার সহিত সাক্ষাৎ করে। তাহাদের সহিত আলােচ্য প্রসঙ্গে অস্ত্র প্রতিযােগীতার ক্ষেত্রে অনুন্নত দেশসমূহের ভূমিকা সম্পর্কে আমি কিছু নীতির কথা বলিয়া ছিলাম। আমার মতে অস্ত্র প্রতিযােগীতার জন্য অনুন্নত দেশসমূহের পক্ষে তাহাদের সম্পদ ও শক্তির অপচয় করা উচিত নহে। কারণ, বিশ্বযুদ্ধের উত্তেজনা সৃষ্টি করা কিংবা বিশ্বশান্তি রক্ষা করা কেবলমাত্র বৃহৎশক্তি জোটেরই সাজে। ক্ষুদ্র দেশসমূহ পরমাণবিক যুদ্ধের জন্য তাহাদের সমস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলির বিনিময়ে সমরাস্ত্র নির্মাণে ব্রতী হইলে তাহা অর্থহীন হইবে, সুতরাং হেন পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের উচিৎ, তাহাদের মধ্যকার সকল অমীমাংসিত বিরােধের অবসান ঘটানাে এবং উভয়ের উচিত শান্ত প্রতিবেশীর ন্যায় পাশাপাশি বসবাস করা ও তাহাদের সকল ব্যয়কে উন্নয়নমুখী করিয়া তােলা। ভারত বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্য লাভ করিয়া ব্যাপক সমরাস্ত্র নির্মাণে ঝাপাইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু ইহার ফলে ভারতের সর্বত্র এবং সর্বক্ষেত্রে উৎকট সংকট ও গণ বিক্ষোভ দেখা দিয়াছে।
ভারতের সহিত বিরােধ নিষ্পত্তির ইচ্ছা প্রকাশ অর্থমন্ত্রী শােয়েব আমার স্বদেশ প্রেম সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। জনাব শােয়েব ও তাঁহার নেতাজী তাহা হইলে কাশ্মীর ও অন্যান্য সমস্যা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিরােধগুলির কোন নিস্পত্তি চান না, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেশপ্রেম সম্পর্কে যত্রতত্র সন্দেহ প্রকাশ করা বর্তমান গণবিরােধী সরকারের নেতৃবর্গের পক্ষে কোন নূতন ঘটনা নহে। আমার নিজের সম্পর্কে আমি শুধু এতটুকুই বলিতে পারি যে, শৈশব হইতেই আমি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করিয়াছি। কিন্তু জনসাধারণ জানিতে চাহিবে যে, স্বাধীনতা আন্দোলনে জনাব শােয়েবের ভূমিকা কী ছিল বা আদৌ ছিল কি না?
দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তনের ঠিক পরেই জনাব শােয়েবের নেতা ভারতের সহিত যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তাব করিয়াছিল। তাঁহার নেতা পাক-ভারত স্থান বিনিময়ও চাহিয়াছেন। যদিও আজ পর্যন্ত ভারতের নিকট হইতে তিনি বেরুবাড়ী আদায় করিতে পারেন নাই। শুধু তাহাই নহে, ভারতের প্রাক্তন কমান্ডার ইন চীফ জেনারেল কারিয়প্পোকে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে অত্যন্ত সামরিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও সফর করিতে দেওয়া হইয়াছে। সম্প্রতি ভারতের ‘ষ্টেটম্যান’ পত্রিকার দুইটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও তাহার শাসনের প্রশংসা করা হয় এবং সম্মিলিত বিরােধী দলের মনােনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নার সমালােচনা করা হয়। আমার বিরুদ্ধে জনাব শােয়েবের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন ব্যক্তি সঠিকভাবেই জনাব আইয়ুব খান ও তাহার সরকারকে ভারতীয় চর বলিয়া আখ্যায়িত করিতে পারেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!