ইত্তেফাক
২২শে নভেম্বর ১৯৬৪
ব্যক্তিগত পছন্দ নয়-
ভােটারদের পছন্দকেই মর্যাদা দিতে হইবে
শেখ মুজিব
(স্টাফ রিপাের্টার)
“নির্বাচন শেষ হইয়াছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে কনভেনশন লীগ নিদারুণভাবে এই নির্বাচনে পর্যুদস্ত হইয়াছে। আজ শেষ রক্ষার জন্য বেপরােয়া নির্যাতন শুরু হইয়াছে। নির্বাচিত বিরােধী দলীয় নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের ছলে-বলে- কৌশলে দলে বাগাইবার জন্য সরকারী লীগ আজ পুলিস সহ গােটা আমলাতন্ত্রকে তাহাদের পশ্চাতে লেলাইয়া দিয়াছে। নির্যাতনের মধ্য দিয়া জয়ী হওয়ার যে দেউলিয়া নীতি সরকার গ্রহণ করিয়াছে, তাহাও ব্যর্থ হইয়াছে কারণ বিগত নির্বাচন শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, এই নির্বাচন একটা অভূতপূর্ব গণজাগরণ। এই গণজাগরণের মুখে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সম্পূর্ণ ধ্বংস হইয়া যাইবে। কালচক্রের দুর্বার গতি কে রুধিতে পারে।”
গতকল্য (শনিবার) বিকালে গফরগাঁও নূতনবাজারে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও সম্মিলিত বিরােধীদলের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত ঘােষণা করেন। শেখ মুজিব নবনির্বাচিত নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের আহ্বান জানাইয়া বলেন, দেশবাসী আপনাদের উপর যে বিশ্বাস ও আস্থা গচ্ছিত রাখিয়াছেন, আপনাদের যে কোন মূল্যের বিনিময়ে সেই বিশ্বাস ও আস্থাকে সমুন্নত রাখিতে হইবে। মনে রাখিবেন, আপনারা প্রত্যেকে এক হাজার ব্যক্তির পক্ষে ভােটদান করিবেন। সেই জন্যই এই ভােটদানের ব্যাপারে আপনার ব্যক্তিগত মতামত বা পছন্দ-অপছন্দের চাইতে আপনার ভােটারদের মতামত ও পছন্দ অপছন্দকেই আজ বেশী মর্যাদা দিতে হইবে। আপনাকে যারা ভােটে পাশ করাইয়াছেন, আপনি তাহাদের মতামতেরই প্রতিভূ। আপনার উপর স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতনের খড়গ নামিয়া আসিতে পারে। কিন্তু নির্যাতনে নিস্পিষ্ট হইলেও আজ জনতার বিশ্বাসকে জয়যুক্ত করিতে হইবে। মানুষের বিশ্বাসকে পদদলিত করিলে শুধুমাত্র মানুষই আপনাদের এবং আপনাদের বংশধরদের বেইমান বলিয়া অপবাদ দিবে না- আখেরাতেও আল্লাহর কাছে আপনাদের জবাবদিহি করিতে হইবে।
শেখ মুজিব বলেন, নির্বাচনী কলেজের নবনির্বাচিত সদস্য ভাইরা মৌলিক গণতন্ত্রকে সত্যিকারের উন্নয়নশীল ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে সম্মিলিত বিরােধীদল বিশেষভাবে আগ্রহী। আজ মৌলিক গণতন্ত্র সংস্থাসমূহকে সরকারের হুকুম বরদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হইয়াছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। আমরা চাই, জনসাধারণের একনিষ্ঠ সেবা প্রতিষ্ঠান হিসাবে মৌলিক গণতন্ত্র দেশবাসীর কাছে শ্রদ্ধার বস্তু হইয়া উঠুক এবং সার্কেল অফিসারদের দাপট ধ্বংস হােক।
গতকল্যকার এই সভায় অধ্যাপক গােলাম আজম, মেসার্স রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, সিরাজুল হক, গিয়াস উদ্দীন, এন, আলম জোয়ারদার, আহমদ আলী মণ্ডল এম,এন,এ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামও বক্তৃতা করেন। মওলানা শামসুল হক এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। নেতৃবৃন্দ গফরগাঁওয়ে পৌছিলে এক বিরাট জনতা তাঁহাদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে। ষ্টেশনে নেতৃবৃন্দকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করা হয় এবং দীর্ঘ এক মিছিল করিয়া তাহাদের সম্মিলিত বিরােধী দলের অফিসে লইয়া যাওয়া হয়। পথিমধ্যে কাওরাইদ, শ্রীপুর, জয়দেবপুর, টঙ্গী প্রভৃতি ষ্টেশনে বিরাট জনতা নেতৃবৃন্দকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। নেতৃবৃন্দ গতকল্য রাত্রেই ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব