You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পয়গাম
২৫শে নভেম্বর ১৯৬৪

শেখ মুজিবের জাতীয় স্বার্থবিরােধী বিবৃতিতে গণমনে ক্ষোভের সঞ্চার

বরিশাল, ২২শে নভেম্বর। -একটি আমেরিকান বার্তা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রচারিত শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের যে বিবৃতি সম্প্রতি ভারতীয় এবং পাকিস্তানী সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে তাহাতে স্থানীয় মুসলিম লীগ মহলই শুধু নয়, অদলীয় জনসাধারণ এবং বিশেষ করিয়া বুদ্ধিজীবী মহলের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হইয়াছে। জনাব মুজিব দেশরক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ হাসের যে প্রস্তাব করেন, তাহা বর্তমান পরিস্থিতিতে কেহই অনুমােদন করিতেছে না। ভুখা থাকিয়াও বর্তমান সংঘর্ষ বহুল বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশরক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ করিতে জনসাধারণ আগ্রহশীল।
ভারতের সহিত সন্ধি স্থাপন সম্পর্কীয় তাহার প্রস্তাবে সকলেই বিস্ময় বােধ করিতেছেন। তাহারা বলেন যে, বরাবরই পাকিস্তান তাহার প্রতিবেশী ভারতের সহিত সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখিয়া চলার আগ্রহ প্রকাশ করিয়া আসিতেছেন। তাহারা প্রকাশ করেন যে, শান্তির জন্যই মরহুম লিয়াকত আলী খান দিল্লি যাইয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। মরহুম মােহাম্মদ আলী (বগুড়া) পণ্ডিত নেহরুকে বড় ভাই সম্বােধনে দিল্লী ছুটিয়াছিলেন ভারতের সহিত মিত্রতা স্থাপনেরই আশায়। শেখ সাহেবের দলীয় উজির জনাব আবুল মনসুরের মধু মিশন সম্পর্কীয় ব্যাপারতাে এই শান্তির জন্যই অনুষ্ঠিত হইয়াছিল।
এতদস্বত্ত্বেও ভারত কাশ্মীর, বেরুবাড়ী এবং অন্যান্য বহু ব্যাপারে আপােষহীন মনােভাব প্রদর্শন করিয়া চলিয়াছেন। লাখ লাখ নির্দোষ ভারতীয় মুসলমানকে পাকিস্তানে ঠেলিয়া দিয়া পাকিস্তানে জাতীয় সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করিতেছে। তাই জনসাধারণের মনে প্রশ্ন জাগিয়াছে যে, শেখ মুজিব কি এরূপ ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ভারতের হাতে তুলিয়া দিয়া সন্ধি করিতে চান? কেহ কেহ রহস্যচ্ছলে প্রকাশ করেন যে, গােপালগঞ্জ টাঙ্গিপাড়ায় অনেক লাঠিয়াল ও বর্শাবাজ আছে বলিয়া শােনা যায়, তাই দেশরক্ষা বাহিনী খর্ব করিয়া লাঠিয়াল দ্বারা দেশ রক্ষা করার চিন্তাই হয়তাে শেখ সাহেব মনে মনে পােষণ করিতেছেন। এখানকার বুদ্ধিজীবী মহল বলেন যে, নির্বাচন প্রাক্কালে সুদূর সাগর পারের উদ্দেশ্যে প্রচারিত এহেন বিবৃতির অবশ্যই একটি গুঢ় তাৎপর্য রহিয়াছে। ইহার দ্বারা হয়তাে তিনি এই মুহূর্তে সম্মিলিত বিরােধী দলের জন্য আমেরিকা, ভারত এবং আরাে দু-একটি বৈদেশিক শক্তির নেকনজর লাভ করিতে চান। এ নিয়া এখনই নানা লােকে নানাকথা বলাবলি করিতেছেন। – সংবাদদাতা

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!