You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
১২ই নভেম্বর ১৯৬৪

নির্বাচনের দ্বিতীয় দিবসেও সম্মিলিত বিরােধী দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা
শতকরা ৯৩টি আসন দখল
নিশ্চিত ভরাডুবির হাত হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য কনভেনশনপন্থীদের ভুয়া
ভােটার আনয়ন

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূর্ব পাকিস্তানের জাগ্রত জনগণের মুক্তির পথে দুৰ্ব্বার জয়যাত্রা অব্যাহত রহিয়াছে। হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের সৈনিকগণ গতকল্যকার নির্বাচনে প্রদেশের সর্বত্র শতকরা ৯৩টি আসনে বিরােধী দলের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করিয়াছেন। গতকল্য বুধবার নির্বাচনের দ্বিতীয় দিবসে এই প্রদেশে ৪ হাজারের উপর নির্বাচন কেন্দ্রে ভােট গ্রহণ করা হয়। ঢাকা শহরের মীরপুর ইউনিয়নে কয়েকটি কেন্দ্রে গােলযােগ সৃষ্টির ফলে তিনটি কেন্দ্রের (৫,৯ ও ১০ নং) রিটার্নিং অফিসার গতকল্য নির্বাচন স্থগিত রাখিয়াছেন। তাছাড়া নবাবগঞ্জ এলাকাতেও নির্বাচন উপলক্ষে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অপর সকল স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে। এই কেন্দ্র তিনটিতে সংঘর্ষে তিনজন বিরােধী দলীয় কর্মী আহত হইয়াছেন বলিয়া জানা যায়। ঢাকা শহরের নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিতে গতকল্য বহু সংখ্যক ভূয়া ভােট প্রদান করা হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। তেজগাঁও পুলিশ এই ভূয়া ভােট প্রদানের অভিযােগে ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়াছে। প্রকাশ, গতকল্য মহিলা ভূয়া ভােটারের সংখ্যা অধিক ছিল বলিয়া অভিযােগ পাওয়া যায়। ঢাকা শহরে গতকল্য অনুষ্ঠিত ৪টি নিৰ্বাচনী কেন্দ্রে সম্মিলিত বিরােধীদল মাত্র ৮টি আসনে পরাজিত হইয়াছে এবং অপর সকল আসনই সম্মিলিত বিরােধীদল, গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও সরকার বিরােধী স্বতন্ত্র প্রার্থিগণ জয়লাভ করিয়াছেন। রাজধানীর রােকোনপুর, হাজারীবাগ, মীরপুর, আজিমপুর, নয়াপল্টন, নওয়াবগঞ্জ, সুলতানগঞ্জ ও ফরাসগঞ্জ ইউনিয়ন কমিটির নির্বাচন হইয়াছে। নারায়ণগঞ্জে ধামগড় ইউনিয়ন কাউন্সিলে গতকল্য ১১জন নির্বাচিত হইয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে ১০জনই বিরােধীদলের সমর্থক। অনুমান করা যাইতেছে, ঢাকা শহর ও প্রদেশের অন্যান্য নির্বাচনী কেন্দ্রে গতকল্য শতকরা ৮৫ জন ভােটদাতা ভােটদান করিয়াছেন। ঢাকায় রােকনপুরেও নিৰ্বাচিত ১২ জনের মধ্যে ১ জনই বিরােধী দলভুক্ত।
স্থানীয় ফরাসগঞ্জ ইউনিয়নের ১৪টি ইউনিটের নিৰ্ব্বাচনেই সম্মিলিত বিরােধীদল ও অন্যান্য বিরােধীদল জয়লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছেন। সম্মিলিত বিরােধী দলের বর্তমান মাসের চেয়ারম্যান শাহ আজিজুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন যে, ১০ই ও ১১ই নবেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্মিলিত বিরােধী দলের প্রার্থিগণ গড়পরতা শতকরা ৯৫টি আসন দখল করিয়াছেন। এই সমস্ত নব নির্বাচিত সদস্য সকলেই বিরােধীদলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাকে ভােট দানের প্রতিশ্রুতি দিয়া শপথনামায় দস্তখত করিয়াছেন। ঢাকা শহরে কেবলমাত্র ৮টি আসন ব্যতীত সবকয়টাতেই বিরােধী দলের প্রার্থিগণ গতকল্য নির্বাচিত হন। সম্মিলিত বিরােধী দলের প্রধান মুখপাত্র শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, গতকল্য বুধবার দ্বিতীয় দিনের নির্বাচনে বিরােধীদল শতকরা ৯০টি আসনে জয়লাভ করিয়াছে। সম্মিলিত বিরােধীদল ও জাতীয় ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ গতকল্যকার নির্বাচনের সময় শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভােট গ্রহণ ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। বিরােধীদলের প্রার্থিগণ বিজয়ী ঘােষণার পরমুহুর্তেই উল্লসিত জনতা “মাদারে মিল্লাত, জিন্দাবাদ” “একনায়কত্ব ধ্বংস হউক” ধ্বনি দিতে দিতে বিজয় মিছিল বাহির করে। তাছাড়া বিজয়ী প্রার্থীদের কোন কোন ক্ষেত্রে স্কন্ধে লইয়া শহর প্রদক্ষিণ করে। ঢাকা শহর ও শহরতলীতে গতরাত্র প্রায় সৰ্ব্বক্ষণই বিরােধী দলের বিজয় উল্লাস চলে। এই প্রদেশে আগামী ১৯শে নবেম্বর পর্যন্ত মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য নির্বাচনে মােট ৩৭ হাজার ৫শত (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বাদ দিয়া) কেন্দ্রে নির্বাচন চলিবে। দ্বিতীয় দিনের নির্বাচনের ফলাফল হইতে ইহাই স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, দেশের জনগণ এক নায়কত্বের নাগপাশ হইতে মুক্তির সংগ্রামে মিস ফাতেমা জিন্নাকে জয়যুক্ত করিয়া দেশ শাসনের অধিকার অর্জন করিতে বদ্ধপরিকর।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!