You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
২৪শে অক্টোবর ১৯৬৪

হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে শেরে বাংলা ও শহীদ সােহরওয়ার্দীর মাজারের পার্শ্বে
খওয়াজা নাজিমুদ্দিনের অন্তিম শয়ন
জননায়কের জানাজায় অর্ধ লক্ষাধিক শােকবিহ্বল লােকের যােগদান

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
শােকাবহ পরিবেশে গম্ভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মরহুম খওয়াজা নাজিমুদ্দিনের লাশ গতকল্য শুক্রবার সকাল ৪ ঘটিকায় হাইকোর্টের পশ্চিম প্রাঙ্গণে দাফন করা হইয়াছে। মরহুমের লাশ দাফনের জন্য হাজার হাজার গুণমুগ্ধ মানুষ শােকাভিভূত হইয়া পড়েন। রাষ্ট্রের সাবেক গবর্ণর জেনারেল উজিরে আজমের লাশ কবরে নামাইবার সময় কাহারাে পক্ষে অশ্রু সংবরণ সম্ভব হয় নাই। মােছলেম বাংলার দুই দিকপাল শেরে বাংলা ফজলুল হক ও শহীদ সােহরওয়ার্দীর কবরের পাশে মরহুমের লাশ কবর দেওয়া হয়।
মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে প্রাদেশিক সরকারের সকল অফিস ও প্রদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ঢাকাস্থ বৃটিশ ডেপুটী হাইকমিশন মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাইবার জন্য বন্ধ রাখা হয়।
খওয়াজা সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাইবার উদ্দেশ্যে গতকল্য জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র গতকল্য নির্ধারিত অনুষ্ঠানসূচীর পরিবর্তে শােকজ্ঞাপক অনুষ্ঠান প্রচার করে।
গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী এবং আজীবন সাধারণ মানুষের কল্যাণে উদ্বুদ্ধ নেতার নামাজে জানাজায় ৫০ হাজারের অধিক লােক শরিক হন। আউটার স্টেডিয়ামে বৈকাল সােয়া তিনটায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মওলানা শামসুল হক (ফরিদপুরী) নামাজে জানাজায় এমামতী করেন। আউটার স্টেডিয়ামের নামাজে জানাজায় প্রাদেশিক গবর্ণর জনাব মােনায়েম খান শরীক হন এবং তাঁহার পক্ষ হইতে মরহুমের লাশের উপর পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
নামাজে জানাজায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ, সর্বশ্রেণীর সরকারীবেসরকারী কর্মচারীবৃন্দ ও কূটনৈতিক মিশনসমূহের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। রাজধানী শহরের নিউমার্কেট ও অন্যান্য বহু অঞ্চলে শােক প্রকাশের জন্য দোকানপাট বন্ধ থাকে। পাকিস্তান কাউন্সিল মােছলেম লীগ সভাপতি খওয়াজা ছাহেবের নামাজে জানাজায় প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার জনাব আবদুল হামীদ চৌধুরী, জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পীকার ও প্রাদেশিক লীগের সভাপতি জনাব আবুল কাসেম, সাবেক কেন্দ্রীয় উজির জনাব ফজলুর রহমান, জনাব তােফাজ্জল আলী, সাবেক প্রাদেশিক উজিরে আলা জনাব নূরুল আমীন ও জনাব আতাউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় উজির জনাব এ, টি, এম মােস্তফা, ঢাকা হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব আমীন আহমদ, শেখ মুজিবর রহমান, জনাব জহিরুদ্দিন, কনভেনশন লীগের। প্রাদেশিক সভাপতি জনাব আবদুল জব্বার খান, শাহ আজিজুর রহমান, সৈয়দ আজিজুল হক, জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী, জনাব মহিউদ্দিন প্রমুখ শরীক হন। বেলা ৪টার সময় লাশ দাফন কালে খওয়াজা ছাহেবের দুই পুত্র ও ছােট ভাই খওয়াজা শাহাবুদ্দিন অশ্রুসিক্ত নয়নে কবরের পাশে দাঁড়াইয়াছিলেন। ঢাকা নওয়াব পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও মরহুমের অন্যান্য আত্মীয়স্বজন এই সময় গভীর শােকের মধ্যে স্তব্ধ হইয়া থাকেন।
শােক মিছিল
জুম্মার নামাজের পর বেলা দুইটার সময় নয়া ইস্কাটন রােডস্থ মরহুমের গৃহ হইতে লাশ লইয়া শােক মিছিল শুরু হয়। শােক মিছিলের অগ্রভাগে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা সজ্জিত একটি ট্রাকের উপর মরহুমের লাশ রক্ষিত ছিল। ফাতেহা পাঠ করিতে করিতে শােক মিছিলে অংশগ্রহণকারিগণ শােকাচ্ছন্ন অবস্থায় পৌণে তিনটার সময় আউটার স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন। নামাজে জানাজার পর শােক মিছিলটি আউটার ষ্টেডিয়াম হইতে রওয়ানা হইয়া শেরে বাংলার মাজারের নিকট পৌছে। দুই পুত্র, ভ্রাতা, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও হাজার হাজার গুণমুগ্ধ অনুসারী ও ভক্তের ক্রন্দনের মধ্যে মরহুমের লাশ ৪টার সময় কবরে নামান হয়। উল্লেখযােগ্য যে, অবিভক্ত বাংলার তিনজন সাবেক উজিরে আলা শেরে বাংলা ফজলুল হক, জনাব শহীদ সােহরওয়ার্দী ও খওয়াজা নাজিমুদ্দিনের কবর হাইকোর্টের পশ্চিম পাশে পাশাপাশি স্থাপিত হইল।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!