You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পয়গাম
১৫ই অক্টোবর ১৯৬৪

ফাতেমা জিন্না আওয়ামী লীগের প্রভাব কবলিত
প্রাথমিক স্বার্থ সিদ্ধির পর শেখ মুজিবরের স্বরূপ প্রকাশ
ভাসানী ও খাজা সাহেবের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি প্রদর্শন

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের সম্মুখে গতকল্য (বৃহস্পতিবার) এই সত্য দিবালােকের মত সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, যদিও “সম্মিলিত বিরােধীদলের নামাঙ্কিত ছাড়পত্রের মাধ্যমে মিস ফাতেমা জিন্নাহ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনােনয়ন লাভ করিয়াছেন, তবুও এখন কার্যতঃ তিনি আওয়ামী লীগের পকেটস্থ হইয়াছেন।
গতকল্য সকালে মিস ফাতেমা জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানে তাহার নির্বাচনী সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকায় পৌছাইলে বিমান ঘাঁটিতে অপেক্ষমান অনেককে বােকা বানাইয়া শেখ মুজিবর রহমান রীতিমত পশ্চাদ্বার দিয়া” মিস জিন্নাহকে বিমান ঘাঁটি হইতে একখানি ভােলা ট্রাকে বসাইয়া শহরাভিমুখে লইয়া আসেন। অবশ্য এই ব্যাপারে প্রবল মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও মওলানা ভাসানী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও জনাব ফজলুর রহমানকে লােকচক্ষুর ভয়ে উক্ত ট্রাকেই আরােহন করিতে হয়।
গতকল্য তেজগাঁও বিমান ঘাঁটিতে মিস জিন্নাহর সম্বর্ধনায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খান অপেক্ষা অনেক কম লােক সমাগত হয়। রাজনৈতিক মহল ইহার কারণস্বরূপ আওয়ামী লীগের সহিত ন্যাপ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম এবং এন, ডি, এফ, দলের ক্রমবর্ধমান অসহযােগিতার বিষয় উল্লেখ করেন। এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য যে, যাহাতে মিস জিন্নাহর সম্বর্ধনা এবং জনসভায় যােগদান করিতে না হয়, তজ্জন্য এন, ডি, এফ, এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ গতকল্য মােমেনশাহী গমন করেন। মিস জিন্নাহর সম্বর্ধনায় এবং জনসভায় সম্মিলিত বিরােধীদলের প্রধানতম হােতা বলিয়া ইতিপূর্বে যাহার নামে ঢাক-ঢােল পিটান হইয়াছে সেই খাজা নাজিমুদ্দিনের রহস্যময় নিস্ক্রিয়তা ও নিরবতা বিরােধীদলের সমর্থকগণকে পর্যন্ত অবাক করিয়া দেয়। এই সম্পর্কে রাজনৈতিক মহল বলেন যে, মিস জিন্নাহর নাম ব্যবহারের মতই নির্বাচনী ক্ষেত্র প্রস্তুতের ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ খাজা নাজিমুদ্দিন এবং মওলানা ভাসানীকে ব্যবহার করিয়াই এখন দূরে ছুঁড়িয়া ফেলিবার উপক্রম করিতেছে। ফলে মওলানা ভাসানী এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের অবস্থা এখন অত্যন্ত করুণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
গতকল্য মিস ফাতেমা জিন্নাহ শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক এবং শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মাজারে গমন করিবেন বলিয়া অনেকে আশা করিয়াছিলেন; কিন্তু শেখ মুজিবর রহমানের নির্দেশে তিনি শেষ পর্যন্ত শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মাজারের কাছে তাঁহার ট্রাক দাঁড় করাইয়াই মাজারে ফতেহা পাঠে লােক দেখানাে দায়িত্ব শেষ করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!