You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.10.19 | এই গণজাগরণ রােধে সাধ্য কার? লালদীঘির বিশাল জনসমুদ্রে নেতৃবৃন্দের হুঁশিয়ারি | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
১৯শে অক্টোবর ১৯৬৪

এই গণজাগরণ রােধে সাধ্য কার?
লালদীঘির বিশাল জনসমুদ্রে নেতৃবৃন্দের হুঁশিয়ারি

(ইত্তেফাক-এর চট্টগ্রাম অফিস হইতে)
১৮ই অক্টোবর- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য লালদীঘি ময়দানের ঐতিহাসিক জনসমাবেশে সতর্কবাণী উচ্চারণ করিয়া বলেন যে, (তাহার বক্তৃতার আংশিক বিবরণ রবিবারের ইত্তেফাকে প্রকাশিত হইয়াছে) আজ দেশব্যাপী গণঅধিকার আদায়ের সগ্রাম শুরু হইয়াছে এবং বর্তমান সরকার যদি জনগণকে তাহাদের অধিকার ফিরাইয়া না দেয় তাহা হইলে তাহাদেরকেও জনাব ইস্কান্দার মীর্জার ভাগ্যই বরণ করিতে হইবে। শেখ সাহেব তাহার জ্বালাময়ী ভাষণে সরকারকে হুঁশিয়ার করিয়া দিয়া বলেন যে, জনগণের দাবী বানচাল করার জন্য কোন ছলচাতুরী করা হইলে জনসাধারণও দাবী আদায়ের জন্য ভিন্ন পথে পা বাড়াইবে। তিনি সরকারকে স্মরণ করাইয়া দেন যে, ১৯৫৮ সালে দেশে যে পরিস্থিতি ছিল, আজ আর তা নাই- আজ জনসাধারণের তন্দ্রা ছুটিয়া গিয়াছে। অধিকার সচেতন জাগ্রত জনসাধারণকে আজ আর ধোকা দেওয়া যাইবে না। তিনি পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে মাদারে মিল্লাতের পিছনে কাতার বন্দী হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ মুজিবর রহমান মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে ভােট দেওয়ার আগে প্রার্থীকে মসজিদ বা মন্দিরে লইয়া গিয়া মাদারে মিল্লাতকে ভােটদানের শপথ করাইয়া নেওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন যে, জনগণের ভােটেই পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে এবং ভােট দ্বারাই দেশবাসী পাকিস্তানে গণতন্ত্র কায়েম করিবে।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, আজাদীর সংগ্রামে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ জানমাল কোরবান করিয়াছে সেই সময় ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব যাহা করিয়াছেন তাহা বৃটিশের গােলামি ভিন্ন কিছু নয়।
তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ অত্যাচারিত নির্যাতিত হইয়াছে-কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, সাংবাদিক কেহই আইয়ুব সরকারের নিপীড়নের হাত হইতে রেহাই পায় নাই।
শেখ সাহেব বলেন যে, পার্লামেন্টারী সরকারের আমলে দেশে যে পরিমাণ দুর্নীতি ছিল বলিয়া শুনা যায়, এখন দুর্নীতির পরিমাণ তদপেক্ষাও বৃদ্ধি পাইয়াছে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব নিজেই তাহার পুত্রের গান্ধারা ইণ্ডাষ্ট্রি লাভের কথা স্বীকার করিয়াছেন এবং যে ব্যাপারে তিনি নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন। অথচ আইয়ুব খান একজন রাজনীতিকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোন অভিযােগই প্রমাণ করিতে পারেন নাই।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব