আজাদ
২০শে অক্টোবর ১৯৬৪
মিস জিন্নার দর্শনলাভের আশায়-
একশত মাইল অতিক্রম করিয়া জনৈক বৃদ্ধের চট্টগ্রাম উপস্থিতি
চট্টগ্রাম, ১৯শে অক্টোবর। গত শনিবার এখানকার লালদীঘি ময়দানে মােহতারেমা ফাতেমা জিন্নার ঐতিহাসিক বক্তৃতা শুনিবার জন্য এবং মােহতারেমার দর্শন লাভের আশায়, জেলার নিভৃত পল্লী হইতে জনৈক অশীতিপর বৃদ্ধ লালদীঘির বিপুল জনসমাবেশে যােগদান করেন এবং গণদাবীর অগ্র কাফেলায় মিস ফাতেমাকে দর্শন করিয়া পরম সন্তোষ লাভ করেন। গণতন্ত্রের অগ্রদূত কায়েদের ভগিনী মিস ফাতেমা জিন্নাকে সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া গণকাফেলার পুরােভাগে দেখিয়া বৃদ্ধ তাহার শেষ বয়সের স্বপন-সাধ চরিতার্থ হওয়ায় উল্লসিত হইয়া উঠেন।
এই গণতন্ত্রাভিলাসী বৃদ্ধই আবদুল করিম সিকদার। বয়সের ভারে জনাব করিম সিকদার বাকিয়া গিয়াছেন এবং জর্জরিত হইয়া পড়িয়াছেন। নিভৃত পল্লী হইতে একশত মাইল পথ অতিক্রম করিয়া এই বৃদ্ধ কায়েদের ভগ্নিকে এক নজর দেখার জন্য লালদীঘির ময়দানে আসিয়াছেন।
মােহতারেমার বক্তৃতা শ্রবণের পর এই বৃদ্ধ বাড়ী ফিরার পথে তাহার মনের বাসনার কথা বলেন। জাতীয় দাবীর এই সংগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদিগকে একসঙ্গে হাতে হাত মিলাইয়া কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে দেখাই তাহার শেষ আশা ছিল। আজ তাহার সেই আশা সার্থক হইয়াছে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। ইহা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল বলিয়া তিনি আবেগে ফাটিয়া পড়েন। যাহা হােক, দেরীতে হইলেও আজ তাহার সে আশা পূর্ণ হইল বলিয়া তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আজ রাজনৈতিক দলসমূহের সকল প্রবীণ এবং নবীন নেতা তাহাদের বিভেদ ভুলিয়া গণ-দাবী আদায়ের যে সংকল্প এবং সংগ্রাম করিতেছেন, তাহা মােহতারেমার ব্যক্তিত্বের জন্যই সম্ভব হইয়াছে বলিয়া উল্লেখ করা হয়। এসম্পর্কে বৃদ্ধ করিম সিকদার আশা প্রকাশ করেন যে, গণতন্ত্রের দুশমনরা এখন গণদাবীর এই বজ্রকঠোর সংকল্পের নিকট মাথা নত করিতে বাধ্য হইবে। মিস ফাতেমা জিন্নার সঙ্গে লেঃ জেঃ আজম খান, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব, জনাব ফরিদ আহমদ, জনাব গােলাম আজম, বেগম রােকেয়া আনােয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাহারাও এই সভায় বক্তৃতা দেন। —পি পি এ
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব