You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.10.19 | গণদাবীর নিকট শাসকগােষ্ঠী নতি স্বীকারে বাধ্য হইবে- যশােরের বিরাট জনসভায় মাদারে মিল্লাতের ঘােষণা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৯শে অক্টোবর ১৯৬৪

গণদাবীর নিকট শাসকগােষ্ঠী নতি স্বীকারে বাধ্য হইবে
যশােরের বিরাট জনসভায় মাদারে মিল্লাতের ঘােষণা

যশাের, ১৮ই অক্টোবর। আজ এখানে আগমনের স্বল্পক্ষণ পরে টাউন হল ময়দানে বিরাট জনসমাবেশে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে মাদারে মিল্লাত মিস ফাতেমা জিন্না বলেন, বর্তমান শাসকবর্গ জনসাধারণের দৃঢ় সংকল্পের নিকট নতিস্বীকার করিয়া তাহাদিগকে তাহাদের জন্মগত অধিকার ফিরাইয়া দিতে বাধ্য হইবেন।
বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি জনসাধারণের মৌলিক অধিকার ছিনাইয়া লওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অভিযােগ করেন। তিনি বলেন, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার যুগ শেষ হইয়া গিয়াছে। এই পাকিস্তানের এই পবিত্র ভূমিতে মানুষের মর্যাদা লইয়া বাঁচিয়া থাকার জন্য আমাদিগকে অবশ্যই হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়া পাইতে হইবে।
এই সময়ে শ্রোতৃমণ্ডলীর তুমুল হর্ষধ্বনিতে তাহার কণ্ঠস্বর ভাসিয়া যায়। তিনি তাঁহার বদ্ধমুষ্টি উদ্যত করিয়া হৃত গণতন্ত্র ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সগ্রামের পথে দৃঢ় ঐক্য বজায় রাখার জন্য জনসাধারণের নিকট আবেদন করেন। এই সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে জেনারেল আজম খান ও শেখ মুজিবর রহমান উভয়েই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মিস জিন্নাকে সমর্থনের জন্য জনসাধারণের প্রতি অনুরােধ জানান।
বিপুল সম্বর্ধনা
ঢাকা হইতে খুলনা গমনের পথে আজ বেলা ১১-১৫ ঘটিকার সময় পি আই এ বিমানযােগে মিস ফাতেমা জিন্না এখানে আগমন করিলে তাহাকে বিপুল সম্বৰ্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। তাঁহার সহিত লেঃ জেনারেল আজম খান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবর রহমান, মওলবী ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গােলাম আজম ও বেগম রােকাইয়া আনােয়ার এখানে আগমন করেন। তাহাদের লইয়া বিমানখানি বিমান বন্দরে অবতরণ করা মাত্র নরনারী ও শিশুর এক বিরাট উল্লসিত জনতা ‘মাদারে মিল্লাত জিন্দাবাদ ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ‘গণতন্ত্র জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি গগনবিদারী ধ্বনিসহকারে বিমানের দিকে ধাবমান হইয়া উহাকে সম্পূর্ণরূপে ঘেরাও করিয়া ফেলে ইহার ফলে মাদারে মিল্লাতের পক্ষে বিমান হইতে অবতরণ করা অসম্ভব হইয়া পড়ে। অতঃপর তাহাকে বিমান বন্দর হইতে একটি জীপে করিয়া শােভাযাত্রা সহকারে তিন মাইল দূরে অবস্থিত সার্কিট হাউসে লইয়া যাওয়া হয়। এই সময় রাস্তার উভয় পার্শ্বে কাতারবন্দীভাবে দণ্ডায়মান বিরাট জনতা উল্লাসধ্বনি সহকারে তাহার ও বিরােধী দলীয় নেতৃবৃন্দের উপর পুষ্পবৃষ্টি করিতে থাকে। সার্কিট হাউসে পৌছানাের অল্পক্ষণ পরে তিনি টাউন হল ময়দানের বিরাট জনসমাবেশে উপরােক্ত বক্তৃতাদান করেন। তাহার বক্তৃতা শােনার জন্য দূরদূরান্তর হইতে আগত বিপুল সংখ্যক নরনারী এখানে সমবেত হয়। বেলা দেড় ঘটিকার সময় বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর তিনি সদলবলে খুলনা অভিমুখে রওয়ানা হন। -এপিপি/পিপিএ।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব