আজাদ
৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪
ঐতিহাসিক পল্টনের আর এক রূপ
জুলুমশাহীর বিরুদ্ধে গগনবিদারী গর্জন
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য মঙ্গলবার ৪টায় পল্টন ময়দানে দুই লক্ষাধিক জনতার এক বিরাট সমাবেশে মওলানা ভাসানী বর্তমান সরকারকে তুলনাবিহীন নির্যাতন করার জন্য দায়ী করিয়া জনসাধারণকে তাহাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও যাবতীয় গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সম্মিলিত বিরােধী দলের নেতৃত্বে অগ্রসর হইতে জোর আহ্বান জানান। সম্মিলিত বিরােধী দলের উদ্যোগে আয়ােজিত উক্ত বিরাট জনসভায় মওলানা ভাসানী সভাপতিত্ব করেন।
তিনি বলেন যে, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের, শ্রমিকদের, শিক্ষকদের, সাংবাদিকদের ও জনসাধারণের অন্যান্য শ্রেণীর উপর জেল, জুলুম, লাঠিচার্জ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ, সদ্য আমদানীকৃত “রায়টকার হইতে উত্তপ্ত পানি নিক্ষেপ প্রভৃতি দ্বারা যে অভাবনীয় নির্যাতন চালাইয়াছেন তাহা অতীতের সকল প্রকারের নির্যাতনের সীমা লংঘন করিয়াছে।
তিনি বলেন যে, জনসাধারণ তাহাদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের দাবী তুলিয়াছে। তাহারা পার্লামেন্টারী শাসন ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের দাবী তুলিয়াছে। অথচ সরকার জনসাধারণের এই সকল রাজনৈতিক অধিকার ও বাঁচার দাবী তুলিলে তাহা স্তব্ধ করার জন্য নজীরবিহীন নির্যাতন শুরু করিয়াছে।
মওলানা ভাসানী ঘােষণা করেন যে, আসন্ন নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লব” সংঘঠিত হইবে। তাই জনগণের ঐক্য দাবী অনুযায়ী ৫টি বিরােধীদল সম্মিলিত হইয়া মােহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্নাকে প্রার্থী মনােনীত করিয়াছে। মােহতারেমা গত ১৭বছর যাবত পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক অধিকার পূর্ণরূপে কায়েমের জন্য অরাজনৈতিকভাবে একটানা কথা বলিয়াছেন, আজ তিনি নামিয়া আসিয়াছেন জনসাধারণকে তাহাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরাইবার সংকল্প লইয়া। তাই স্বৈরাচারী জুলুম শাহী প্রধান একজন মুছলমান হইবেন কি সেনানী হইবেন, তাহা জনসাধারণের বিবেচ্য নহে, বরং স্বৈরাচারীর অবসান ঘটাইবার জন্য ঐক্যবদ্ধ জনসাধারণ ভােট যুদ্ধে অবতীর্ণ হইতেছেন। সুতরাং যাহারা স্বৈরতন্ত্র বহাল রাখিতে চাহেন তাহারা জুলুমশাহীর পক্ষে ভােট দিবেন, আর যাহারা স্বৈরতন্ত্রের অবসান চাহেন তাহারা মােহতারেমাকে ভােট দিবেন। সুতরাং ইহাতে নির্যাতন চালাইবার অবকাশ কোথায়? তিনি বিপুল জনসমুদ্রকে উদ্দেশ্য করিয়া তাহারা বর্তমান আইয়ুব শাসনের অবসান চাহেন কিনা জানিতে চাহিলে ৪লক্ষ হাত একযোগে উর্দ্ধে উত্তোলিত হইয়া দ্ব্যর্থহীন ভাবে ভাসানী জনতার এই রায়ে শােকরিয়া আদায় করিয়া বলেন যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে এই জনমত লক্ষ্য করিয়া অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, আজ নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুধু সম্মিলিত রাজনৈতিক দলগুলিই নহে, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, যুবক ও অন্যান্য শ্রেণী এমনকি মহিলারা পৰ্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে জুলুমের অবসান দাবীতে জোর আওয়াজ তুলিয়াছেন। আজ শুধু একদিনের জন্য হরতাল পালিত হইয়াছে। কিন্তু অবিলম্বে জুলুম বন্ধ না করা হইলে আমরা চুপ করিয়া নির্যাতন প্রত্যক্ষ করিব না বরং উহা প্রতিরােধের জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করিব।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব