You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.10.01 | হরতাল সম্পর্কে প্রেসনােটের “অসত্য ভাষণের” নিন্দা- বেতার ও সরকারের বিকৃত প্রচার সম্পর্কে শেখ মুজিবের বিবৃতি | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১লা অক্টোবর ১৯৬৪

হরতাল সম্পর্কে প্রেসনােটের “অসত্য ভাষণের” নিন্দা
বেতার ও সরকারের বিকৃত প্রচার সম্পর্কে শেখ মুজিবের বিবৃতি

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান। গতকল্য বুধবার এক বিবৃতিতে ২৯শে সেপ্টেম্বরের হরতাল সম্পর্কে সরকার প্রদত্ত প্রেসনােটের “অসত্য ভাষণের” কঠোর নিন্দা করিয়া উহাকে মিথ্যা ভাষণের কালিমালিপ্ত নিকৃষ্টতর দলিলরূপে আখ্যায়িত করেন।
ঢাকা নগরীর সর্বাত্মক হরতাল সম্পর্কে সরকারী প্রেসনােটে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদত্ত হইয়াছে তাহার সত্যতা বিচারের ভার তিনি ঢাকা শহর ও শহরতলীর প্রায় দশ লক্ষ অধিবাসীর উপর ন্যস্ত করেন।
শেখ মুজিবর রহমান ঐ দিনের হরতাল, জনসভা ও শােভাযাত্রার যে বিকৃত সংবাদ রেডিও মারফৎ প্রচারিত হইয়াছে তাহারও কঠোর সমালােচনা করিয়া বেতার কর্তৃপক্ষকে এই বলিয়া হুশিয়ার করিয়া দেন যে, জনসাধারণের ট্যাক্সে পরিচালিত বেতার কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে তাহাদের নিজস্ব ঘটনার সত্য খবর প্রদানের পরিবর্তে কনভেনশন লীগের দোসররূপে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার পরিণাম শুভ হইবে না।
তিনি সর্বাত্মক হরতাল, মিছিল ও জনসভা অনুষ্ঠান দ্বারা জুলুম বিরােধী দিবসকে সফল করার জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, মােমেনশাহী ও অন্যান্য স্থানের সকল শ্রেণীর জনসাধারণকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
ঢাকায় স্বার্থবাদী মহলের প্রচারণা
গত ২৯শের সর্বাত্মক হরতাল সম্পর্কে বিকৃত তথ্য মফঃস্বলবাসীর কাছে পরিবেশনের উদ্দেশ্যে স্বার্থবাদী মহল বহু অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন। এইদিন নীলক্ষেত ব্যারাকের নিকটে সকাল ৬টায় যে ট্রেনটি থামিয়া যায় তৎসম্পর্কে সরকার সমর্থক পত্রিকায় একটি ছবি প্রকাশিত হইয়াছে। উহাতে ইঞ্জিনের সম্মুখে দুইটি লােহার খুটি দেখা গিয়াছে। প্রত্যক্ষদর্শীর খবরে প্রকাশ, ট্রেনটি থামার সময় উক্ত লােহার খুটি দুইটির কোনই অস্তিত্ব ছিল না, বরং ঐদিন ঢাকার সকল হরতাল অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু স্বার্থবাদী মহল তাহাদের নিজস্ব ব্যাখ্যার সুবিধার জন্য ছবি তােলার পূৰ্বে অনুরূপ লােহার সুটি স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। আবার একটি মিষ্টির দোকানের যে একখানি ছবি প্রকাশ করা হইয়াছে সে সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী বলেন যে, নীলক্ষেতের একটি মিষ্টির দোকানের অভ্যন্তরে শুধু কয়েকটি চেয়ার টেবিল উল্টাইয়া ও একটি থালা মেঝেতে নিক্ষেপ করিয়া সাজান ফটো তােলা হয়। অথচ “লুণ্ঠিত” দোকানে মিষ্টি অক্ষত অবস্থায় থালায় সজ্জিত দেখা যায়। প্রকাশ, একটি বিশেষ মহল ঐদিন তিনজন ফটোগ্রাফারকে বিভিন্ন অভিনব” ফটো তােলার জন্য শহর পরিক্রমণের দায়িত্ব দেন। তাছাড়া জনৈক “রহস্যজনক” ফটোগ্রাফার ঐদিন নিজেকে এক এক সময় স্থানীয় একটি উরদু পত্রিকা বা সরকার সমর্থক একটি বাংলা ‘পত্রিকা’ অপর ক্ষেত্রে বিশেষ একখানি বিরােধী দলীয় পত্রিকার ফটোগ্রাফার নামে পরিচয় দেন। কিন্তু সরকার সমর্থক একটি হােটেলে সে নাজেহাল হওয়ার অভিযােগ পাওয়া যায়।
বিশ্বস্তসূত্রে জানা গিয়াছে যে, ঐদিন জনসভা অনুষ্ঠানের পূর্বে বেলা আড়াইটা হইতে রাস্তায় গাড়ী ঘােড়া চলাচলের ব্যবস্থা হওয়ার পর সরকারী মহল তিন খানি গাড়ী শহরে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করিয়া উক্ত “ফটোগ্রাফার পরিচয়দানকারী ব্যক্তির সন্ধান করা হয়। সন্ধ্যার পরে তাহাকে উক্ত সরকারী মহলের ফটো স্টুডিওতে উপস্থিত করা হয় এবং চলচ্চিত্রের “ মেক আপের” কায়দায় তাহার বিভিন্ন ভঙ্গীর ফটো তােলা হয়। সরকারী মহলের তােলা সকল ফটো স্থানীয় সকল পত্রিকায় প্রদানের বিধান থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সরকার সমর্থক একটি পত্রিকায় উক্ত ফটোটি পরিবেশন করা হয়। ফটোটি ভাল রূপে লক্ষ্য করিলেই স্টুডিওতে রাত্রের আলােয় তােলা ছবির রহস্য ধরা পড়িবে। উক্ত ব্যক্তির পিঠে কালি দ্বারা মেক আপের অনুরূপ যে চিহ্ন দেখা গিয়াছে উহাকে রক্ত ও ক্ষত বলিয়া প্রকাশ করা হইয়াছে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব