You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.10.03 | এইবার হয় মানুষের মুক্তি না হয় অবলুপ্তি -শেখ মুজিব | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৩রা অক্টোবর ১৯৬৪

এইবার হয় মানুষের মুক্তি না হয় অবলুপ্তি
-শেখ মুজিব

(স্টাফ রিপাের্টার)।
“স্বৈরাচারী সরকারকে আমি শেষবারের মত সতর্ক করিয়া দিতে চাই, যদি সরকারী নির্যাতনের ষ্টিম রােলার আজও নিরীহ দেশবাসীকে নিস্পিষ্ট করে, যদি আজও সরকারী স্বেচ্ছাচার দেশের মাটিকে কলঙ্কিত করে, তবে এই দেশের দশ কোটি মানুষ জীবনপণ করিয়া নির্যাতনের ষ্টিম রােলারকে স্তব্ধ করিয়া দিবে এবং সরকারী স্বেচ্ছাচারের নায়কদের চিরদিনের তরে এই দেশের মাটি হইতে উৎখাত করিয়া দিবে। বিগত জুলুম প্রতিরােধ দিবসে এই দেশের বিক্ষুব্ধ মানুষের পুঞ্জীভূত বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়াছে। কিন্তু এইখানেই এর শেষ নয়, এই তার শুরু মাত্র। প্রয়ােজন হইলে মাসের পর মাস দেশময় পূর্ণ হরতাল পালন করা হইবে এবং প্রমাণ করিয়া দেওয়া হইবে যে, এই দেশ কাহারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়, এই দেশ ১০ কোটি মানুষের যৌথ সম্পত্তি। সম্মিলিত বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দ স্বৈরাচারী শাসনের বিষাক্ত ছােবলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে হুশিয়ার হইয়া সংগ্রামে অবতীর্ণ হইয়াছেন। এইবার শেষ সংগ্রাম- হয় মানুষের মুক্তি, নয় মানুষের অবলুপ্তি।”
গতকল্য (শুক্রবার) নারায়ণগঞ্জ মহকুমার ফতুল্লা থানার এক বিরাট আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত বিরােধী দলের অন্যতম মুখপাত্র শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত ঘােষণা করেন।
শেখ মুজিব কর্মীদের স্মরণ করাইয়া দেন যে, আজ বক্তৃতার দিন নয়, আজ সংগ্রামের দিন। জনসাধারণের হাতে সংগ্রামের দুই প্রকারের হাতিয়ার আছে। একটি শান্তিপ্রিয় ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং অপরটি হইতেছে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন। আমরা শান্তিপ্রিয় ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী এবং সেজন্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন শুরু করা হইয়াছে। এই সংগ্রামের কোথায় শেষ, আজও বলা মুস্কিল।
মিস জিন্নার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপনের আহ্বান জানাইয়া শেখ মুজিব কর্মীদের বলেন যে, দেশবাসী বিশ্বাস করে যে, যদি মিস জিন্নাহ প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন তবে তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা দেশবাসীর হাতে ফিরাইয়া দিবেন। এই বিশ্বাস আছে বলিয়াই সম্মিলিত বিরােধীদল তাহাকে মনােনীত করিয়াছে। মিস ফাতেমা জিন্নাহ জীবনভর জুলুম ও জালেমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়াছেন।
বক্তৃতার উপসংহারে শেখ মুজিব কর্মীদের সর্বপ্রকারের ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হইবার আহ্বান জানান।
গতকল্যকার এই সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সভাপতি জনাব তফাজ্জল হােসেন সরকার সভাপতিত্ব করেন। মহকুমা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক পালামেন্টারী সেক্রেটারী জনাব আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ উকিল বারের সম্পাদক এডভােকেট ফজলুর রহমান এবং মহকুমা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব বজলুর রহমান বক্তৃতা করেন। প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বক্তৃতা প্রসঙ্গে সকল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করিয়া তােলার জন্য কর্মীদের অনুরােধ করেন।
শেখ মুজিবর রহমানের ফতুল্লা উপস্থিতি উপলক্ষে স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব