ইত্তেফাক
১২ই অক্টোবর ১৯৬৪
‘এবারকার সংগ্রামের পরিণতি হয় মুক্তি নয় মৃত্যু’
নারায়ণগঞ্জের জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমানের উক্তি
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (রবিবার) বিকালে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শীতলক্ষ্যা তামাকপট্টিতে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান বলেনঃ ‘নির্বাচন ঘনাইয়া আসিয়াছে। সরকারী লীগ চোখে সরিষার ফুল দেখিতে শুরু করিয়াছে। দেশের সর্বত্র আজ দুর্বার গণআন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছে। আন্দোলনের ব্যাপকতায় সরকারী লীগ শঙ্কিত হইয়া উঠিয়াছে। নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে নির্বাচন বানচাল করিয়া দেওয়ার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রের আলামত পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু সাবধান, নির্বাচন বানচাল করার কোন প্রচেষ্টা অন্ততঃ পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা বরদাশত করিবে না। এবারকার সংগ্রাম চরম সংগ্রাম। এ সংগ্রামের পরিণতি হয় মুক্তি, নয় মৃত্যু। এ সংগ্রামে হয় দেশবাসী সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হইবে, নয় চিরতরে অধিকার বঞ্চিত হইবে। তাই আজ সকল ভেদাভেদ ভুলিয়া সংঘবদ্ধ হইতে হইবে। সংঘবদ্ধ জনতাই আজ শক্ৰধ্বংসের একমাত্র মারণাস্ত্র।
গােকনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বিরাট জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমদ, নারায়ণগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব বজলুল রহমান, জনাব ফজলুর রহমান এ্যাডভােকেট, কাজী মজিবর রহমান, জনাব মােহাম্মদ হাসান, জনাব সাজেদ আলী মােক্তার, জনাব মনসুর আহমদ প্রমুখ বক্তৃতা দান করেন।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমদ তাহার বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সগ্রামী ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, সর্ব প্রথম বিরােধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগই এদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাইয়া যাইতেছে।
গতকল্যকার জনসভায় নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আওয়ামী লীগে যােগদানের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন। ইহারা হইলেনঃ জনাব আফিজুদ্দিন সরদার, জনাব সিরাজুল ইসলাম (পাট ব্যবসায়ী), সরদার মােহন মিয়া, জনাব আবদুল মালেক সরদার এবং জনাব আবদুল লতিফ। জনাব সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যােগদানকালে আওয়ামী লীগ তহবিলে ৫০১ টাকা দান করেন। পরে শেখ মুজিবর রহমান উক্ত অর্থ নারায়ণগঞ্জ সিটি ও মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে ব্যয়ের জন্য সিটি আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব মহিউদ্দিনের হস্তে প্রদান করেন।
প্রস্তাবাবলী
নারায়ণগঞ্জের এই জনসভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে সম্মিলিত বিরােধী দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মােহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্নাহকে পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। এক প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ নেতা খােন্দকার মােশতাক আহমদ এ্যাডভােকেট ও খাজা রফিক সহ সকল রাজবন্দীর অবিলম্বে মুক্তি দাবী করা হয়। সভায় গৃহীত সর্বশেষ প্রস্তাবে শহীদ নগরের অধিবাসীদের স্থায়ী বন্দোবস্ত দানের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান হয়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব