You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.09.14 | সংঘবদ্ধ আন্দোলনের দ্বারাই অধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব- টাঙ্গাইলে বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবরের ঘােষণা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৪

সংঘবদ্ধ আন্দোলনের দ্বারাই অধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব
টাঙ্গাইলে বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবরের ঘােষণা

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
টাঙ্গাইল, ১৩ই সেপ্টেম্বর- অদ্য স্থানীয় পার্ক ময়দানে টাঙ্গাইল মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, একমাত্র সংঘবদ্ধ গণ-আন্দোলনের মারফতই জনগণের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব এবং এজন্যই সকল বিরােধী দল সম্মিলিত হইয়া এক্ষণে সগ্রামে নামিয়াছে। তিনি আসন্ন নির্বাচনে জনসাধারণের কর্তব্য বিশ্লেষণ করিয়া জনগণকে সেই সকল ব্যক্তিকে মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচন করিতে আহ্বান জানান, যাহারা জনগণের অধিকার ফেরত দেওয়ার ওয়াদাপত্রে স্বাক্ষর দান করিবেন। তিনি বলেন যে, একমাত্র ওয়াদায় স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিদের নির্বাচন করিয়াই দেশে গণতন্ত্র ফিরাইয়া আনা যাইতে পারে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ্যাডভােকেটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জহিরুদ্দিন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব আবদুল খালেক, জাতীয় পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য জনাব আবদুল মুন্তাকিম চৌধুরী, তরুণ আইনজীবী শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব হাতেম আলী তালুকদার বক্তৃতা দান করেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমদও জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বাহ্নে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে জামুকী এবং সেহরাতৈলে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এই দুই স্থানে নেতৃবৃন্দকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। নেতৃবৃন্দকে টাঙ্গাইলের তিন মাইল আগে হইতে এক বিরাট রিকশা শােভাযাত্রা সহকারে টাঙ্গাইলে লইয়া যাওয়া হয়। জনসভার পরে নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ অফিস পরিদর্শন করেন এবং ট্রান্সপাের্ট কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে আয়ােজিত এক চা-চক্রে যােগদান করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবর রহমান তাহার বক্তৃতায় দেশে সামরিক শাসন জারির পটভূমি বিশ্লেষণ করিয়া বলেন যে, শাহেদ আলী হত্যা দেশে সামরিক শাসন জারির কারণ নহে। বরং ১৯৫৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে তাহাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রতি কোন প্রকার বঞ্চনা সহ্য করিবেন না এবং সকল ব্যাপারে ন্যায্য অংশ আদায় করিবেন- এই ভয়ে ভীত হইয়া শিল্পপতি ও আমলাতান্ত্রিকরা সম্মিলিত ভাবে দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তন করে বলিয়া শেখ মুজিব উল্লেখ করেন।
দেশে দুর্নীতি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়া সামরিক শাসন প্রবর্তকরা যে অভিযােগ করিতেন, তৎসম্পর্কে শেখ মুজিব বলেন যে, এক্ষণে দুর্নীতি বহুতর গুণ বাড়িয়া গিয়াছে।
শেখ মুজিব আরও বলেন যে, বর্তমানের ক্ষমতাসীনরা দেশের বহু উন্নতি করিয়াছেন বলিয়া যে দাবী করেন উহা সঠিক নহে। কারণ এক্ষণে জনগণ যেহারে কর দেয় অতীতে কোন সময়ই এত বেশী কর দিতে হয় নাই। ওয়ার্কস প্রােগ্রাম সম্পর্কে আলােচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, অডিট ছাড়া কোন ব্যয় হইতে পারে এমন নজির কোথাও দেখা যায় না। শেখ মুজিবর রহমান ২৫বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকদের ২৫ বৎসর পর্যন্ত কর মওকুফ করার দাবীর সমর্থনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রদেশের রাজস্বের হিসাব দিয়া বলেন যে, উপরােক্ত ব্যবস্থা গৃহীত হইলে প্রতি বৎসর সরকারের মাত্র ১ কোটি টাকা ঘাটতি হইবে। তিনি বলেন যে, সরকার যেখানে শিল্পপতিদের ১ হাজার কোটি টাকা কর রেহাই দিতে পারেন সেখানে গরীব ঋণগ্রস্ত কৃষকদের কেন সামান্য কর মওকুফ করিতে পারিবেন না?

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব