ইত্তেফাক
১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৪
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের করাচী যাত্রা
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
আগামী ১৭ই সেপ্টেম্বর করাচীতে সম্মিলিত বিরােধীদলের সভায় যােগদানের জন্য গতকল্য (মঙ্গলবার) পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ করাচীর পথে ঢাকা ত্যাগ করেন। সম্মিলিত বিরােধী দলের বৈঠকে যােগদানের পূর্বে আওয়ামী নেতৃবৃন্দ অদ্য (বুধবার) করাচীতে পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যােগদান করিবেন। ওয়ার্কিং কমিটির এই বৈঠক দুইদিন চলিবে। করাচী যাত্রার প্রাক্কালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের বলেন যে, সম্মিলিত বিরােধী দলের বৈঠকে বিরােধী দলগুলি সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একজনমাত্র প্রার্থী মনােনয়ন করিতে সমর্থ হইবে। তিনি বলেন যে, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সম্মিলিত বিরােধী দলের পক্ষে প্রার্থী মনােনয়ন সম্ভব হইবে না বলিয়া যে স্বার্থান্বেষী মহল প্রচারণা চালাইতেছে, তাহারাই প্রকৃত গণ-দুশমন এবং এইসব কায়েমী স্বার্থবাদের শিখণ্ডিদের সম্পর্কে দেশবাসীকে হুঁশিয়ার হইতে হইবে।
বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, সম্মিলিত বিরােধী দলের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মিস জিন্নাহ ও জেনারেল আজম খানের বিষয় বিবেচনা করা হইবে। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, বিশেষ কোন প্রার্থী সম্পর্কে আওয়ামী লীগের বিশেষ কোন আকর্ষণ নাই এবং আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা সম্পূর্ণ খােলা মন লইয়া এই বৈঠকে যােগদান করিতেছেন। তিনি বলেন যে, সম্মিলিত বিরােধী দল দেশবাসীর আশা-আকাংখা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস পাইবে।
শেখ মুজিব বলেন যে, গণতন্ত্র ফিরাইয়া আনিয়া দেশে জনসাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ যে সংগ্রাম চলিয়াছে, আগামী নির্বাচন সেই সংগ্রামেরই একটি অংশ এবং আগামী নির্বাচনকে সংগ্রামের দৃষ্টিকোণ হইতেই বিচার করিতে হইবে। তিনি দেশবাসীকে সংগ্রামের দৃঢ়তা লইয়া আগামী নির্বাচনের মােকাবিলা করিতে আহ্বান জানান।
গতকল্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান, নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্পাদক জহিরুদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমান, প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সহ-সভানেত্রী ও জাতীয় পরিষদ সদস্যা বেগম রােকাইয়া আনােয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমদ, প্রচার সম্পাদক হাফিজ হাবিবুর রহমান, সমাজসেবা সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান, পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী জনাব আবদুর রহমান খান ও গাইবান্ধা টাউন কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সাইদুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ কর্মী জনাব রেজাউল মালিক করাচি গমন করেন। বিমান বন্দরে ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগের কর্মীবৃন্দ তাঁহাদিগকে বিদায় সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন।
অদ্য (বুধবার) প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জনাব নূরুল ইসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যােগদানের জন্য করাচী গমন করিবেন।
আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর নেতৃবৃন্দ ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিবেন বলিয়া আশা করা যায়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব