You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৪

খান সবুরের জবাবে শেখ মুজিব

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (শুক্রবার) ঢাকায় এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, সরকারী কর্মকর্তারা বিশেষ করিয়া মন্ত্রী বাহাদুরেরা জনসাধারণ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া রাজছত্রের নিরাপদ ছায়ায় বাস করেন বলিয়াই আগামী নির্বাচনে বিরােধীদল শতকরা একটি আসনও পাইবে না বলিয়া তাঁহারা বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন যে, দেশে যদি গণতন্ত্র থাকিত আর প্রাপ্ত বয়স্ক ভােটাধিকারের ভিত্তিতে যদি দেশবাসী নির্বাচনে ভােটদানের সুযােগ পাইত তবে আগামী নির্বাচনে কনভেনশন লীগ ১৯৫৪ সালের প্রবল পরাক্রান্ত আদি ও অকৃত্রিম মুসলিম লীগের চাইতেও গুরুতর পরাজয় বরণ করিতে বাধ্য হইত। তিনি ঘােষণা করেন যে, বঞ্চিত দেশবাসীর বুকে ‘অসন্তোষের আগুন’ ধোয়াইতেছে এবং যথাসময়ে বঞ্চনাকারীদের বিরুদ্ধে এই আগুন দাবানলের মত জ্বলিয়া উঠিবে।
গত বৃহস্পতিবার লাহােরে আগামী নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব সবুর খান যে উক্তি করিয়াছেন, শেখ মুজিব তাহার জবাবে উপরােক্ত মন্তব্য করেন।
বর্তমান সরকারের ও এই সরকারের রক্ষাকবচ বর্তমান শাসনতন্ত্রের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য শেখ মুজিব অবিলম্বে গণভােট অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান। সরকারের প্রতি তাঁহার চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তি করিয়া তিনি বলেন যে প্রাপ্ত বয়স্ক ভােটাধিকার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত গণভােটে যদি সরকার পক্ষ অন্ততঃ শতকরা ২০ ভাগ ভােটও পান তবে দেশবাসী বর্তমান শাসনতন্ত্রই মানিয়া লইবে। তিনি আশা করেন যে, সরকার মুখে মুখে জনপ্রিয়তার দাবী না করিয়া এইবার উহা যাচাই করিতে আগাইয়া আসিবেন।
সীমিত ভােটাধিকারের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলেও শেখ মুজিব এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের দাবী জানান। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করিয়া দিয়া বলেন যে, আগামী নির্বাচনে যদি সরকার শাসনতন্ত্র ব্যবহার করার বা প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টির প্রয়াস পান তবে দেশবাসী সর্বশক্তি দিয়া তাহা রুখিয়া দাঁড়াইবে এবং গত উপ-নির্বাচনের মত সরকার যদি যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হয় তবে এইবার তাহার পরিণাম অত্যন্ত খারাপ হইবে। নিরপেক্ষ ও সরকারী চাপ বিমুক্তভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে বিরােধীদল জয়লাভ করিবে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।
শেখ মুজিব বলেন, সাহস থাকে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে স্ক্রীনিং-এর ব্যবস্থা বিলােপ করিয়া জনাব সবুর তাঁহার নেতার জনপ্রিয়তা যাচাই-এর জন্য আগাইয়া আসুন, দেখিবেন তাহার দাবী কতখানি অন্তঃসারশূন্য।
তিনি ঘােষণা করেন যে, জনাব সবুরের মনে যত সন্দেহই থাক, বিরােধী দলের পক্ষ হইতে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে মাত্র একজন প্রার্থীই খাড়া করা হইবে। প্রেসিডেন্ট পদে বিরােধী দলের প্রার্থী মনােনয়নের প্রশ্নে জনাব সবুরকে মাথা না ঘামাইবার জন্য শেখ মুজিব উপদেশ দেন।
ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, বর্তমান শাসকরা দেশের ছাত্রসমাজ সম্পর্কে দায়িত্বহীন উক্তি করায় অভ্যস্ত এবং এইসব দায়িত্বহীন উক্তিতে শুধু যে ছাত্রসম্প্রদায়েরই অবমাননা করা হয় তাহা নহে, দেশবাসী আপামর জনসাধারণের প্রতিও অসম্মান প্রদর্শন করা হয়। তিনি বলেন যে, এই দেশের ছাত্র সম্প্রদায় অত্যন্ত অধিকার সচেতন এবং সেজন্যই তাহাদের ক্রীড়নক হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন যে, সরকারী প্রভুরা – গৌরীসেনের অর্থকোষ’ উন্মুক্ত করিয়া দিয়াও যে ছাত্র সম্প্রদায়কে ক্রীড়নকে পরিণত করিতে পারে নাই তাহা মন্ত্রী জনাব সবুর যে, জানেন না, তাহাও নহে। সুতরাং জানিয়া-শুনিয়া এদেশের ছাত্রদের সম্পর্কে এ ধরনের হীন ধারণা দেওয়া জাতির জন্যই অমঙ্গলকর।
২৯শে আগষ্টের ছাত্রধর্মঘটের উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিব বলেন যে, এই দিনের ধর্মঘট সম্পূর্ণই ছাত্রদের শিক্ষা সংক্রান্ত ছিল। এইদিন ছাত্র ধর্মঘট শুধু সার্থকই হয় নাই প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘটের ফলে রেল চলাচল পর্যন্ত বন্ধ হইয়া যায়। শেখ মুজিব জনাব সবুরের উদ্দেশে বলেন যে, সেদিন ঢাকায় ছাত্রদের উপর পুলিসি জুলুম সম্পর্কে দেশবাসী সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং এই সম্পর্কে জনাব সবুরের সাফাই-এর কোন সুযােগ নাই।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!