ইত্তেফাক
৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৪
স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাসীন পূর্ব পাকিস্তানীরা নিজেদের বিকাইয়া দিয়াছে
হবিগঞ্জের জনসভায় শেখ মুজিব কর্তৃক স্বার্থবাজদের মুখােশ উন্মােচন
(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
শেখ মুজিবর রহমান গত বুধবার হবিগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেন যে, বর্তমান শাসতন্ত্রেই ডিক্টেটরী শাসন কায়েমের ব্যবস্থা রহিয়াছে। আর শাসনতন্ত্রের দ্বিতীয় সংশােধনীতে এই শাসনব্যবস্থা চিরস্থায়ী করার আয়ােজন করা হইয়াছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন কিছু সংখ্যক পূর্ব পাকিস্তানী স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজেদেরকে বিকাইয়া দিয়াছে। তাহারা জনসাধারণের কোনরূপ স্বার্থের তােয়াক্কা করে না। শেখ মুজিব এই সমস্ত বিশ্বাসঘাতকের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনসাধারণকে হুঁশিয়ার করিয়া দেন।
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব আবদুল মুন্তাকিম চৌধুরী জনগণের ভােটাধিকার হরণের তীব্র সমালােচনা করিয়া বলেন যে, সরকার পক্ষ প্রেসিডেন্ট পদধারীদের সম্পত্তির পরিমাণ ঘােষণার অসম্মতি জানাইয়াছে কেন তাহা সুস্পষ্ট।
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, উভয় অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়াই চলিয়াছে। ফলে, পূর্ব পাকিস্তান দেওলিয়া হইয়া গিয়াছে। উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হইতেছে। অথচ কোন প্রকার সুবিধা-ব্যতীতই পূর্ব পাকিস্তানকে এই ঋণের বােঝা বহন করিতে হইবে।
সভায় শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী দলনের নিন্দা করিয়া বলেন যে, সরকারের এই নীতির দরুন স্বাধীনতাই নিরর্থক হইয়া পড়িয়াছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুল হাই সভায় বক্তৃতাকালে আসন্ন মৌলিক গণতন্ত্র নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থীদের ভােট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানান। অদ্যকার সভায় বহু দূরদূরান্তের পল্লী অঞ্চলের জনসাধারণ যােগদান করেন। এই উপলক্ষে এখানে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব