You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.09.08 | দেশবাসী যদি বাঁচিয়া থাকে অধিকার তাহারা ফিরাইয়া আনিবেই- মাদারীপুরের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবরের বক্তৃতা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৪

দেশবাসী যদি বাঁচিয়া থাকে অধিকার তাহারা ফিরাইয়া আনিবেই
মাদারীপুরের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবরের বক্তৃতা

(ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরিত)
মাদারীপুর, ৬ই সেপ্টেম্বর- ‘ক্ষমতাসীন চক্র দেশবাসীর দাবী এই মুহূর্তে না মানিলেও দাবী তাহাদের একদিন মানিতেই হইবে। সেইদিন বেশী দূরে নয়যেদিন দেশে দেশবাসীর অধিকার তথা যাবতীয় দাবী-দাওয়া প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং গণ-আদালতে গণ-দুশমনদের বিচার হইবে। দেশবাসী যদি বাঁচিয়া থাকে, দেশের রাজনীতিকরা যদি বাঁচিয়া থাকেন, তবে দুর্বার ও দুর্জয় সগ্রামের মাধ্যমে দেশবাসীর হৃত অধিকার তাহারা ফিরাইয়া আনিবেই আনিবে। ভাইরা আমার, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হােন এবং বুঝিবার চেষ্টা করুন, কোথায় আপনারা আছেন, কি আপনাদের অবস্থা। অদ্য স্থানীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়ােজিত বিশ সহস্রাধিক লােকের এক জনসভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত ঘােষণা করেন। তিনি বলেন যে, এত কথা, এত ব্যথা আজ পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিয়াছে যে, বলিয়া শেষ করা যাইবে না। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে কারাগার আজ হাতছানি দিয়া ডাকিতেছে।
শেখ মুজিব বলেন যে, দেশবাসীর সহিত বিশ্বাসভঙ্গকারীরাই আজ রাষ্ট্র শাসন করিতেছে, এই সত্যটি ভুলিলে চলিবে না। কারণ আজ যাহারা রাষ্ট্রের হাল ধরিয়াছেন, তাঁহাদের কেহ কেহ ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র রক্ষা করার এবং শাসনতন্ত্র মােতাবেক কাজ করার শপথ গ্রহণ করিয়া পরে সেই শপথ ভঙ্গ করিয়া আল্লাহর কাছে ও দেশবাসীর প্রতি বেইমানী করিয়াছেন।
শেখ মুজিবর রহমান কনভেনশন লীগের সমর্থকদের জিজ্ঞাসা করেন, পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে সাহেদ আলীর হত্যাকে কেন্দ্র করিয়া যদি সামরিক শাসন জারি হইয়া থাকে তবে যেদিন পাকিস্তানের সামরিক ঘাটির মূলকেন্দ্র রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে হত্যা করা হয় সেই দিন কেন সামরিক শাসন জারি করা হয় নাই। ডাক্তার খান সাহেবের মত প্রবীণ রাজনীতিককে যেদিন হত্যা করা হয়, খাজা নাজিমুদ্দিনকে যেদিন প্রধানমন্ত্রিত্ব হইতে অপসারিত করা হয়, যেদিন পাকিস্তানের বিধান পরিষদ ভাঙ্গিয়া দেওয়া হয়, সেদিন এদেশে সামরিক শাসন জারি করা হয় নাই কেন? শেখ মুজিব দেশবাসীকে বলেন, ১৯৫৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে বানচাল করাই সামরিক শাসন জারির একমাত্র উদ্দেশ্য। কারণ, কায়েমী স্বার্থবাদীরা বুঝিতে পারিয়াছিল যে, যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের শাসন কায়েম হইবে এবং পূর্ব পাকিস্তানকে শােষণ করার পথ চিরতরে রুদ্ধ হইয়া যাইবে। সামরিক শাসনামলের ও পরবর্তী কালে পূর্ব পাকিস্তানের উপর যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নির্যাতন চালানাে হইয়াছে, শেখ মুজিব তাহা বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন।
শেখ মুজিব দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাইয়া বলেন, কপালে যাই থাকুক এইবার গণদুশমনদের মােকাবিলা করিতে চাই। আপনারা ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে প্রার্থীদের ভােট দেওয়ার আগে পবিত্র কোরান লইয়া শপথ করাইবেন যে, নির্বাচিত হইলে তিনি প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে ভােট দিবেন না। আপনারা সংঘবদ্ধ হউন- জয় আমাদের সুনিশ্চিত।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব